ভয়ংকর ও রহস্যময় ৫টি দ্বীপ যেখানে যাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারবেন না !!



সমুদ্রের বুকে মাথা তুলে রাখা প্রবাল দ্বীপের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই। বিশ্বের হাজার হাজার দ্বীপের মধ্যে কিছু যেমন আপনাকে টানবে, আবার কিছু কিছু দ্বীপ থেকে দূরে থাকাই শ্রেয় মনে করবেন আপনি। মেক্সিকোর পুতুলের দ্বীপ, ইতালির ইসোলা দেলা গাইয়োলা বা বঙ্গোপসাগরের আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ছোট একটি দ্বীপ উত্তর স্যানটিনোল দ্বীপসহ বিশ্বের ভয়ংকর ও রহস্যময় ৫টি দ্বীপ নিয়ে থাকছে এবারের আয়োজন।



ভয়ংকর ও রহস্যময় ৫টি দ্বীপ নিয়ে তথ্যচিত্র দেখুন বাংলায়-



ভয়ংকর ও রহস্যময় ৫টি দ্বীপ যেখানে যাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারবেন না !!

পুতুলের দ্বীপ

ভয়ংকর ও রহস্যময় ৫টি দ্বীপ যেখানে যাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারবেন না
পুতুলের দ্বীপ, মেক্সিকো। Photo: Wikimedia Commons

মেক্সিকোর এই দ্বীপটির স্থানীয় নাম ‘লা ইলা ডি লাস মিনিকেস’। বাংলা মানে করলে দাড়ায় পুতুলের দ্বীপ। আক্ষরিক অর্থেই এই দ্বীপের বাসিন্দারা বিভিন্ন আকারের পুতুল। পর্যটক তো দুরে থাক, অবসর কাটাতে স্থানীয়রাও যেতে চায় না এই দ্বীপে। কারণ, দ্বীপটির গাছে গাছে ঝুলে থাকা ভুতুড়ে পুতুল মানুষকে নিরুৎসাহিত করে এই দ্বীপে যেতে।

এর পেছনে অবশ্য একটি করুন কাহিনী রয়েছে বলে লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে। গল্পটি বেশ কিছুদিনের পুরোনো। মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটি থেকে ১৫ মাইল দক্ষিণে সাচিমিলোকো খালের প্রান্তে একটি দ্বীপ ‘লা ইলা ডি লাস মিনিকেস’। অনেক বছর আগে ডন জুলিয়ান সান্টানা নামে একজন কেয়ারটেকার থাকতেন এই দ্বীপে। একদিন দ্বীপের পাশে ছোট্ট একটি মেয়েকে ভাসতে দেখেন তিনি। মেয়েটিকে বাঁচানোর চেষ্টায় কোনো ত্রুটি রাখেননি তিনি। কিন্তু মেয়েটি মারা যায়। মেয়েটির পাশেই একটি পুতুল ভাসতে দেখে সেটিকে স্মৃতি হিসেবে গাছে ঝুলিয়ে রাখেন তিনি। শিশুটির মৃত্যু তারমধ্যে এতটাই প্রভাব ফেলে যে এরপর থেকে প্রায়ই গাছের ডালে পুতুল ঝুলিয়ে রাখতে থাকেন তিনি। দ্বীপটির পাশেই ডুঁবে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত করে যান এই কাজ। আর এখন স্থানীয় লোকজন এবং কখনো কখনো দুঃসাহসী পর্যটকরা গাছের ডালে পুতুল ঝুলিয়ে দিয়ে সেই ধারাকে বজায় রাখার চেষ্টা করছেন।

ইসোলা দেলা গাইয়োলা

ভয়ংকর ও রহস্যময় ৫টি দ্বীপ যেখানে যাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারবেন না
ইসোলা দেলা গাইয়োলা। Photo: Public Domain

ছোট্ট একটি দ্বীপ তার সাথে ছবির মতো একটি ভিলা। এই দ্বীপটির মালিক হতে পারা সৌভাগ্যের ব্যাপারই বটে। কিন্তু ইতালির নেপলসে অবস্থিত ইসোলা দেলা গাইয়োলা নামের এই দ্বীপটির বেলায় কিন্তু প্রতিবারই ঘটেছে এর উল্টোটা। স্থানীয়দের কাছে এই দ্বীপ অভিশপ্ত। ঘটনার শুরু উনিশ শতকের শুরুর দিকে। তখন এই দ্বীপে বাস করতেন এক সন্ন্যাসী। একদিন এক অবস্থাসম্পন্ন জেলে এই দ্বীপটি কিনে নিয়ে ভিলা তৈরি শুরু করে। ফলে ওই দ্বীপ থেকে বিতাড়িত হয়ে পড়ে ওই সন্ন্যাসী। এরপর থেকেই অভিশপ্ত হয়ে আছে এই দ্বীপটি।

দ্বীপের প্রথম মালিক লুইগি তার মাছের ব্যবসায় ক্ষতি সামলাতে না পেরে দ্বীপটি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। ১৯২০ সালের দিকে এর পরের মালিক হ্যান্স ব্রাউন নামে এক সুইস ব্যক্তিকে তার কম্বলের মধ্যে মোড়ানো অবস্থায় মৃত পাওয়া যায়। কিছুদিনের মধ্যে তার স্ত্রীও সমুদ্রে ডুবে মারা যায়। এর পরের মালিক এক ধনী জার্মান গাড়ি ব্যবসায়ী যিনি এই ভিলায় হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। পরের মালিক এক ওষুধ ব্যবসায়ী যিনি পাগলাগারদে আত্মহত্যা করেন। এরপর আসেন জার্মান স্টিল ব্যবসায়ী ব্যারন কার্ল পল। তার ব্যবসাতেও নামে ধস। ভিলা ছাড়তে হয় তাকে।

এছাড়া, ইতালির ফিয়াট মোটর কোম্পানির প্রধান জানি এগনিয়েলি এই দ্বীপটি কিনে কিছুদিন বাস করেছেন। এসময় তার পরিবারের অনেক সদস্যরই অপঘাতে মৃত্যু হয়। আমেরিকান তেল ব্যবসায়ী পল গেটি পরে কিনে নেন এই দ্বীপটি। এরপরই তার নাতি জনকে মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করা হয়। মুক্তিপণ দিয়ে নাতিকে ফিরিয়ে আনা হলেও জন বাকি জীবন মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় কাটিয়ে দেন। দ্বীপটির শেষ মালিক জিয়ান পাসকেল নামে এক ইন্স্যুরেন্স ব্যবসায়ী জিনি দেউলিয়া হয়ে জেলে যেতে বাধ্য হন।

এতসব ঘটনার পর স্থানীয়রা তো বটেই বাইরের মানুষও দ্বীপটি কিনতে উৎসাহী হয়নি। স্থানীয় সমুদ্রের পরিবেশ রক্ষার জন্য বর্তমানে এই দ্বীপটিতে মানুষের যাতায়াত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এক অর্থে কিন্তু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন এর সম্ভাব্য ক্রেতারা।


রামরি দ্বীপ

ভয়ংকর ও রহস্যময় ৫টি দ্বীপ যেখানে যাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারবেন না
রামরি দ্বীপ। Photo: Wikimedia Commons

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪৫ সালে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের কাছে, উপকূলে ব্রিটিশ বাহিনীর সাথে লড়ছিলো একদল জাপানি সেনা। জাপানি সেনারা সংখ্যায় ছিলো এক হাজার জনের মতো। প্রতিপক্ষের তুলনায় কমশক্তি জেনে, জাপানি সেনারা রামরি দ্বীপটি পাড়ি দিয়ে দশ মাইল দূরে অপর পাড়ে জাপানি ঘাঁটিতে পৌঁছানোর পরিকল্পনা করে। কিন্তু তারা ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারেনি কি বিভিষীকা অপেক্ষা করে আছে তাদের জন্য।

রামরি দ্বীপের জলাভূমিতে লোনাপানির কুমির ছিলো সংখ্যায় অগুনতি। ভাগ্যাহত সৈনিকরা যেচে পড়ে যেন হাজির হলো ক্ষুধার্ত কুমিরের সামনে। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও, এক হাজার সেনার মধ্যে জলাভূমিটি পার হতে পেরেছিলো মাত্র ২০জন। বাকি সবাই কুমিরের পেটে গিয়েছে বলে দাবি করা হয়। যদিও এই সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে। অনেকে বলেন, সেদিন ৪০০ জনের মতো মারা গিয়েছিলো। আর তাদের সবাই কুমিরের পেটে যায়নি। অনেকেই, ব্রিটিশ বাহিনীর গুলিতে, পানিশুন্যতা বা পানিতে ডুবে মারা গিয়েছিলো।

এরপর থেকে ওই দ্বীপ নিয়ে মানুষের মধ্যে আতংক বিরাজ করতো। যদিও জলবায়ু পরিবর্তেন প্রভাবে বেশিরভাগ কুমিরই এখন লোপ পেয়েছ। কিন্তু গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে, এ ঘটনাকে স্থান দেয়া হয়েছে।

সাপের দ্বীপ

ভয়ংকর ও রহস্যময় ৫টি দ্বীপ যেখানে যাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারবেন না
সাপের দ্বীপ ইলা ডা কিইমডে গ্রান্ডে। Photo: Public Domain

ব্রাজিলের উপকূলে প্রশান্ত মাসাগরের বুকে ছোট্ট একটি দ্বীপ ইলা ডা কিইমডে গ্রান্ডে। কিন্তু এই দ্বীপটি বেশি পরিচিত আইল্যান্ড অব স্নেইক বা সাপের দ্বীপ নামে। বিশ্বে বেশ কিছু সাপের দ্বীপ রয়েছে কিন্তু বথ্রপ ইনসিলারিস বা সোনালী চোখা মাথাবিশিষ্ট পিট ভাইপার সাপ যা খুবই বিষাক্ত, শুধুমাত্র এই দ্বীপেই বাস করে।

ন্যাড়া পাথরের পাহাড় বা রেইনফরেস্টে আচ্ছাদিত বন্ধুর ভূমি সব জায়গায়ই দেখতে পাওয়া যায় এই সাপ। এবং এরা সংখ্যায় এত বেশি যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। বলা হয় এখানে প্রতি বর্গমিটারে একটি করে সাপ বাস করে। ধারণা করা হয় এই দ্বীপে চার লাখেরও বেশী সাপ রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি জরিপে এই সংখ্যা ৪ হাজারের বেশি দেখানো হয়নি।

সংখ্যা নিয়ে যে বিতর্কই থাক এটা ঠিক যে, বিষাক্ত সাপে ঠাসা এই দ্বীপে কোনো মানুষই যেতে আগ্রহী নয়। বিপন্ন প্রজাতির সাপ এবং সাপের হাতে মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে বর্তমানে এই দ্বীপটিতে সর্ব সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে।


উত্তর স্যানটিনোল দ্বীপ

ভয়ংকর ও রহস্যময় ৫টি দ্বীপ যেখানে যাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারবেন না
উত্তর স্যানটিনোল দ্বীপ। Photo: NASA/Public Domain

বঙ্গোপসাগরের আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের মাঝে ছোট একটি দ্বীপের নাম উত্তর স্যানটিনোল দ্বীপ। গভীর রহস্যময় এই দ্বীপটি সম্পর্কে খুব কমই জানতে পেরেছে মানুষ। কারণ এই দ্বীপে বসবাসকারী একদল হিংস্র মানুষ যারা বাইরের মানুষের উপস্থিতি কোনভাবেই সহ্য করে না। সভ্যতা থেকে পুরোপুরো বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপটির মানুষরা হাজার হাজর বছর ধরে এই দ্বীপেই বাস করে আসছে বলে মনে করেন অনেক গবেষক।

ইতিহাস ঘেটে জানা যায় প্রাচীনকালেও ভারত উপমহাদেশের মানুষ এই দ্বীপটি সম্পর্কে জনাতো। এটি অশুভ জায়গা বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাকৃতিকভাবেই দ্বীপটিতে প্রবেশ করা দুরুহ ব্যাপার। যে কারণে এই দ্বীপ এড়িয়েই চলতো সবাই।

১৮৬৭ সালে এই দ্বীপের কাছে একটি জাহাজ ডুবে যায়। জাহাজের ১০৬ জন ক্রু আক্রান্ত হয় স্যানটিনোল দ্বীপের বাসিন্দাদের দ্বারা। পরে নৌবাহিনীর জাহাজ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে আনে। ১৮৮০ সালে মরিস ভডাল পোর্টম্যান নামে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক কর্মকর্তা দলবল নিয়ে ওই দ্বীপে সফলভাবে নামতে সক্ষম হন। কয়েকদিন পর ওই দ্বীপ থেকে দুজন প্রপ্তবয়স্ক এবং চারজন শিশুকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় পোর্ট ব্লেয়ারে। সেখানে প্রাপ্তবয়স্ত দুজনের মৃত্যু হলে শিশুদের ওই দ্বীপে ফেরত পাঠানো হয়।

১৯৭৫ ও ১৯৭৭ সালে দ্বীপটির কাছে দুটি জাহাজ ডুবে যায়। স্যানটিনোলবাসীরা জাহাজ দুটিতে লুটপাট চালায়। ১৯৮১ সালে আরেকটি জাহাজ ডুবে যায় ওই দ্বীপের কাছে। স্যানটিনোলবাসীরা হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। এসময় একটি ঝড় আসায় তারা নিরস্ত হয়। পরে নৌবাহিনীর হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধার করা হয় জাহাজের আটকে পড়া ক্রুদের। ২০০৬ সালে দুই ভারতীয় জেলেকে হত্যা করে দ্বীপের বাসিন্দারা। তাদের নৌকা ভাসতে ভাসতে ওই দ্বীপের কাছে চলে গিয়েছিলো।

এরপর অনেকবার ওই দ্বীপে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু দ্বীপবাসীদের হামলায় তা আর বাস্তাবিয়ত হয়নি। ১৯৯৭ সালে ওই দ্বীপে যাওয়া নিষিদ্ধ করে দিয়েছে ভারত সরকার।


বাংলায় দুর্দান্ত সব ভিডিও দেখতে আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন- Funny Frog Creatives



Image Credit:
1. পুতুলের দ্বীপ, মেক্সিকো। Photo: Wikimedia Commons. Author : Esparta Palma.
2. রামরি দ্বীপ। Photo: Wikimedia Commons.Author : Arezarni1.

0/Post a Comment/Comments

Previous Post Next Post