আপনি জানেন হয়তো সুদানে মিশরের চেয়ে বেশি পিরামিড রয়েছে। আর বিশ্বের সবেচয়ে বেশি পিরামিড রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকায়। যদিও আমরা এখনো জানিনা ঠিক কোন উদ্দেশ্যে বা কিভাবে তৈরি হয়েছিলো এই বিশাল বিশাল স্থাপনাগুলো। আর প্রাচীন এক সভ্যতা থেকে আরেক সভ্যতার মধ্যে হাজার হাজার মাইল দূরত্ব থাকলেও সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত যেসব পিরামিড খুঁজে পাওয়া গেছে সেসসবের মধ্যে একটা অদ্ভুৎ সামঞ্জস্যও অবাক করেছে গবেষকদের। অদ্ভুত ৫টি পিরামিডের রহস্য নিয়ে পড়ুন এই বিশেষ প্রতিবেদন।
অদ্ভুত ৫টি পিরামিডের রহস্য নিয়ে নির্মিত বিশেষ তথ্যচিত্র দেখুন বাংলায়-
অদ্ভুত ৫টি পিরামিডের রহস্য
পৃথিবীর একমাত্র আট পার্শ্বযুক্ত পিরামিড
গিজার গ্রেট পিরামিড পৃথিবীর একমাত্র আট পার্শ্বযুক্ত পিরামিড। Photo: Public Domain |
গিজার গ্রেট পিরামিডের নাম অবশ্যই শুনেছেন। অনেকে হয়তো স্বচক্ষে দেখেও এসেছেন। এর বিশালত্ব আপনাকে অবাক করবে যতটা না তার চেয়ে বেশি অবাক হবেন যখন জানবেন এটাই বিশ্বে এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া একমাত্র আট পার্শ্বযুক্ত পিরামিড। এই পিরামিডের চারটি পার্শ্ব সামান্য অবতল। যে কারণে এই পিরামিডের কেন্দ্রটি অসাধারণ একটি কৌনিক অবস্থান সৃষ্টি করেছে যা বিশ্বের একমাত্র আট পার্শ্বযুক্ত পিরামিডের জন্ম দিয়েছে। যদিও এই অসাধারণ নির্মাণকৌশল ভূমি থেকে বা দূর থেকে দেখলেও বোঝা যায় না। বোঝা যায় শুধুমাত্র উপর থেকে দেখলে এবং বছরের বিশেষ একটা সময়ে। শরৎ ও বসন্তকালে ভোরে এবং সূর্যাস্তের আলোয় কেবলমাত্র দেখা মেলে এই দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যকলার।
তাপমাত্রার তারতম্য
গিজার গ্রেট পিরামিডের ভেতর উষ্ণ এবং অপেক্ষাকৃত শীতল দুটি জায়গা রয়েছে। Photo: Philippe Bourseiller / HIP Institute, Faculty of Engineering, Cairo / Ministry of Antiquities. |
সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে গিজার গ্রেট পিরামিডের ভেতর উষ্ণ এবং অপেক্ষাকৃত শীতল দুটি জায়গা রয়েছে যেখানকার তাপমাত্রা বলেতে গেলে সবসময় প্রায় একইরকম থাকে। বলা যায়, হাজার বছর ধরেই এই তাপমাত্রা ধরে রেখেছে পিরামিডটি। মূলত পিরামিডের ভেতর লুকোনো কোনো স্থাপনা আছে কি না তা পরীক্ষা করার জন্য বিজ্ঞানীরা আধুনিক ইনফ্রারেড এবং থ্রিডি প্রযুক্তি ব্যবহার করছিলেন। ইনফ্রারেড থার্মোগ্রাফি পরীক্ষায় পিরামিডের ভেতরে বেশকিছু অসামঞ্জস্য ধরা পড়ে। পরীক্ষার পর দেখা যায় পিরামিডের ভেতরে এক পাশে একটি উষ্ণ এবং একটি শীতল এলাকা রয়েছে। আর ওই এলাকার তাপমাত্রা উঠানামা করে না, বলতে গেলে সবসময় একই রকম থাকে। এবং অদ্ভুতভাবে পিরামিডের অন্যপাশে এই পরিবেশ দেখা যায় না। যদিও কি কারণে বা কিভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের এমন পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলো প্রাচীন মিশরীয়রা তা এখনো জানা যায়নি।
প্রাচীনতম পিরামিড
গুনাং পেডাং নামে প্রায় মাটির নিচে চাপা পড়ে যাওয়া এই পিরামিডকেই বিশ্বের প্রাচীনতম পিরামিড হিসেবে ধারনা করা হয়।Photo: Wikimedia Commons. Author: Mohammad Fadli. |
পিরামিডের কথা উঠলেই আমাদের সামনে মিশরের ছবি ভেসে উঠে। কিন্তু এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া পিরামিডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনোটা কিন্তু মিশরে নয়, রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার জাভা প্রদেশে। গুনাং পেডাং নামে প্রায় মাটির নিচে চাপা পড়ে যাওয়া এই পিরামিডটি যে সবচেয়ে পুরোনো পিরামিড এ নিয়ে অনেকের মধ্যেই বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু হাল আমলের আধুনিক জিও ইলেকট্রিক এবং জিও ম্যাগনেটিক পরীক্ষায় এই পিরামিডের প্রায় ৫০ ফুট গভীরে একটি বিশাল কক্ষের খোজ পেয়েছেন গবেষকরা। এছাড়া আগ্নেয়শিলা কেটে বানানো পাথরের বিশাল বিশাল খন্ডগুলোর পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা জানান তা খ্রিস্ট্রেরও জন্মের ৭ হাজার বছর আগে তৈরি করা হয়েছিলো। আবার অনেকের মতে এই পিরামিডটি ২০ হাজার বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিলো। ভূতত্ববিদ ড. ড্যানি হিলম্যানের মতে, প্রায় ৩১১ ফুট উঁচু এই পিরামিডটি নির্মাণে যে ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতা দেখতা হয়েছে, তাতে প্রমাণ হয় প্রাচীন সভ্যতার মানুষরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে কতটা উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছিলো।
দক্ষ শ্রমিক না ক্রীতদাস
পিরামিড তৈরির জন্য সমগ্র মিশর থেকেই দক্ষ শ্রমিকরা আসতেন। Photo: Public Domain |
অনেক দিন ধরেই মানুষের মধ্যে একটা ধারনা ছিলো পিরামিড বানানোর কাজে ফারাওরা দাসদের ব্যবহার করতেন। অবশ্য পিরামিডের ইতিহাস ঘাটলে এমন একটা ধারনা হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু যদি বলা হয় সাধারণ দাসদের পক্ষে এত নিখুঁতভাবে পিরামিড তৈরি করা সম্ভব হলো কিভাবে? তাহলে সে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় না। এদিকে, ১৯৯০ সালে পিরামিডের পাশে একটি দেয়াল আবিষ্কার করা হয়। পরে জানা যায় সেটা আসলে একটি কবর। দেয়ালে লেখা হায়ারোগ্লিফিকের মানে উদ্ধার করে জানা যায় কবরে শায়িত ব্যক্তিটি পিরামিড নির্মাণের এক দক্ষ শ্রমিক ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে, পিরামিডের মতো এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনার পাশে একজন সাধারণ নির্মাণ শ্রমিককে কবর দেয়া হয়েছিলো কেন। এরপর অনেকেই মত দেন, পিরামিড তৈরির জন্য সমগ্র মিশর থেকেই দক্ষ শ্রমিকরা আসতেন। আর কাজ করতে গিয়ে কারো মৃত্যু হলে সম্মান দেখিয়ে তাকে ফারাওয়ের পাশেই কবর দেয়া হতো।
হারিয়ে যাওয়া শীর্ষ
পিরামিডের চূড়ায় একটি গোলক বসানো ছিলো যা হোরাসের চোখ নামে পরিচিত ছিলো। Photo: Public Domain |
গিজার গ্রেট পিরামিডের ভেতর কোনো মমি খুঁজে না পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে তবে কি উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়েছিলো এই পিরামিডটি। আরো আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই পিরামিডের চূড়ায় একসময় একটা সমতল চূড়ার ত্রিকোণাকার মূল্যবান পাথর বসানো ছিলো। যা কোনো একসময় চুরি হয়ে গিয়েছে বলে মিশরীয় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এক স্প্যানিশ গবেষকের মতে ওই পিরামিডের চূড়ায় একটি গোলক বসানো ছিলো যা হোরাসের চোখ নামে পরিচিত ছিলো। প্রাচীন মিশরীয়দের কাছে এই চোখ বিপদ থেকে রক্ষা, রাজকীয় ক্ষমতা এবং ভালো স্বাস্থ্যের প্রতিক ছিলো। তার মতে গিজার এই পিরামিডটি তৈরি করা হয়েছিলো সূর্য এবং আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা লুব্ধকের পূজা করার জন্য। লুব্ধক তারাটি ছিলো মিশরিয়দের দেবী আইসিসের সাথে সম্পর্কযুক্ত। কিন্তু এই পিরামিডের চুরি হয়ে যাওয়া শীর্ষটি খুঁজে না পাওয়া গেলে হয়তো কখনোই জানা যাবে না, কি রহস্য লুকিয়ে আছে ওই হারিয়ে যাওয়া শীর্ষে।
বাংলায় দুর্দান্ত সব ভিডিও দেখতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন- Funny Frog Creatives
Post a Comment