হারানো শহর আটলান্টিস ! আসলেই কি ছিলো পৌরাণিক এই সভ্যতাটি ??

রহস্যময় হারানো শহর আটলান্টিস ! আসলেই কি ছিলো পৌরাণিক এই সভ্যতাটি ??
রহস্যময় হারানো শহর আটলান্টিস। Photo: Public Domain

হারানো শহর আটলান্টিসের কথা হয়তো অনেকেই জানেন। হাজার হাজার বছর ধরে এই রহস্যময় শহরটি নিয়ে অনেক আলোচনা বিতর্ক হয়েছে। অনেকে বিশ্বাস করেন আবার অনেকে করেন না। এখনো অনেক গবেষক অনবরত খুঁজে বেড়াচ্ছেন সেই হারানো সভ্যতাকে।  কিন্তু আজ পর্যন্ত একটি ব্যাখ্যাতীত রহস্য হিসবে মানুষের মনে রয়ে গেছে এই পৌরাণীক শহরটির নাম।




হারানো শহর আটলান্টিস ! আসলেই কি ছিলো পৌরাণিক এই সভ্যতাটি ??


হতে পারে আটলান্টিসের অস্তিত্ব একটি কল্পিত কাহিনী যা শুধুমাত্র পৌরাণিক উপকথাতেই পাওয়া গেছে। আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে একটি দ্বীপ ছিলো আটলান্টিস। খৃষ্টপূর্ব ৩৬০ অব্দের দিকে গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর লেখা “ডায়ালগ টাইমাউস এন্ড ক্রিটিয়াস” বইয়ে আটলান্টিসের কথা প্রথম তুলে ধরা হয়। সেখানে প্লেটো বলেন হারিয়ে যাওয়া সভ্যতা আটলান্টিসের কথা যা খ্রিস্টপূর্ব ৭ হাজার বছর আগে শৌর্যে বীর্যে অপ্রতিদ্বন্দ্বি ছিলো। তাদের ছিলো অপ্রতিরোধ্য নৌশক্তি। ইউরোপের বেশিরভাগটাই দখলে নিয়েছিলো তারা। কিন্তু একদিন ও রাতের একটি ভয়াবহ প্রলয়ে সমুদ্রে বিলীন হয়ে যায় গোটা দ্বীপ।

আটলান্টিস শুধু একটি বিশাল আকারের শহর ছিলো না, এটা ছিলো সব দিক থেকেই অসাধারণ। অনেকের মতে আটলান্টিস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পসাইডন নামক এক দেবতা। আশ্চর্যের বিষয় হলো পসাইডন ছিলেন সাগরের দেবতা আর তিনি ক্লেইটো (Cleito) নামে এক সুদর্শনা নারীকে আকৃষ্ট করার জন্যে এই শহরের ভিত্তি স্থাপন করেন। পসাইডন সাগরের কাছাকাছি বিশাল একটি পাহাড় তৈরি করেন যা আটলান্টিস নামে পরিচিতি পায়।

আটলান্টিসবাসীরা নিজেদের খাবার নিজেরাই উৎপাদন করতো। তারা পশু পালন করতো এবং সেগুলোকে তারা দুটি উদ্দেশ্যে লালন-পালন করতো। তারা পশু পালন করতো মাংশের জন্য আর বিক্রি করার জন্য। আটলান্টিসবাসীরা দুঃষ্প্রাপ্য সব ধাতব পদার্থ ব্যবহার করতো। তারা তামা ও দস্তার মিশ্রণে তৈরি ধাতুর দ্রব্য ব্যবহার করতো।

আটলান্টিসবাসীদের গড় আয়ু ছিলো প্রায় ৮০০ বছরের মতো আর তাদের স্বাস্থ্য এবং শক্তি ছিলো অবিশ্বাস্য। তাই বলা যায় আটলান্টিসবাসীরা ছিলো মানুষের আদি নমুনা। কিন্তু সবকিছু বিবেচনা করে তাদেরকে এলিয়েন বা জ্বীন-পরী বললেও ভুল হবে না।


হয়তো অনেকেই জানেন, আটলান্টিস পরিচিত এর বিশাল বিশাল মন্দিরের জন্য। মন্দিরের ভিতরে ছিলো বিশাল আকারের সব মূর্তি যেগুলো ছিলো স্বর্ণের তৈরি এবং বহুমূল্য। শহরটি এতোই সমৃদ্ধ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিলো যে তাদেরকে বাইরের কোন সভ্যতার সাথে যোগাযোগ করার কোনো প্রয়োজন ছিলো না।

আটলান্টিস কোথায় অবস্থিত ছিলো এটা নির্দিষ্ট করে বলাটা অসম্ভব একটা ব্যাপার। অনেকের মতে আটলান্টিসের গল্প পুরোটাই কল্পিত। অনেকে দাবী করেছেন যে- রুপকথার আটলান্টিসের মতো কোন স্থান বা কোন সমাজ অথবা কোন জাতি-গোষ্ঠী পৃথিবীতে কোনো কালেই ছিলো না। প্লেটোর মতে- আটলান্টিস ছিলো বিশাল একটি দ্বীপ। তিনি আরো বলেছেন, আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যেই ছিলো আটলান্টিস। আবার অনেকে বিশ্বাস করে যে আটলান্টিস যে স্থানে ধ্বংস হয়েছে তা এখন এজোরস নামে পরিচিত।

আবার অনেক তাত্বিকের মতে, মানুষ যাদেরকে আটলান্টিসবাসী মনে করেন, তারা তাদেরকে এলিয়েন বা ভিনগ্রহবাসীও ভাবতে পারেন। কারণ আটলান্টিসবাসীদের যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা থেকে জানা যায়, তাদের মানসিক প্রকৃতি ছিলো সাধরণ মানুষ থেকে সম্পুর্ণ আলাদা। তারা ছিলো বিশাল লম্বা আর তাদের গায়ের রঙ ছিলো মানুষের গায়ের রঙ থেকেও অনেক বেশি উজ্জ্বল।

অনেকের মতে এটা হতে পারে প্লেটো তার নৈতিক বক্তব্য গুলোকে তুলে ধরার জন্যে আটলান্টিস নামে একটি কল্পিত সভ্যতার আশ্রয় নিয়েছিলেন, যার মাধ্যমে তিনি দৃষ্টান্ত সহকারে তার বক্তব্য গুলোকে তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু চিন্তা করে অবাক হতে হয় যে সময় এই আটলান্টিসের কাহিনী লেখা হয়েছিলো তখন দুনিয়াতে খুব কম সুযোগ ছিলো আশেপাশে ঘুরে দেখার। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, পানির নিচে একটা শহর আসলে কতটুকুই বা বিশ্বাসযোগ্য?

0/Post a Comment/Comments

Previous Post Next Post