প্রাচীন মিশরের সাথে পিরামিড আর ফারাওদের নাম বেশি আলোচনায় আসলেও, আরো অনেক কারণেই এ সভ্যতাটি গুরুত্বপূর্ণ। সবেচেয় বেশি সময় ধরে টিকে থাকা এ সভ্যতার ব্যাপ্তি জ্ঞান-বিজ্ঞান বা স্থাপত্যকলার উৎকর্ষতাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিলো। প্রাচীণ মিশরের ২০টি চমকপ্রদ সত্য নিয়ে পড়ুন এই বিশেষ প্রতিবেদন।
প্রাচীণ মিশরের ২০টি চমকপ্রদ সত্য নিয়ে তথ্যচিত্র দেখুন বাংলায়-
প্রাচীণ মিশরের ২০টি চমকপ্রদ সত্য যা আপনাকে অভিভূত করবে !!
১. ফারাওদের স্ত্রীরা এমনিতেই অনেক মর্যাদা এবং ক্ষমতার অধিকারী হতেন। কিন্তু রাজ্য পরিচালনার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও দক্ষতার সাথে পালন করেছেন অনেক নারী। এদের মধ্যে নেফারতিতি, হ্যশেপসুট, সোবেনেফেরো এবং সবচেয়ে আলোচিত রানী ক্লিওপেট্রা।
২. স্ফিংসের নাক কিভাবে ভেঙ্গে গিয়েছিলো তা নিয়ে এখনো রহস্য রয়েছে। অনেকদিন ধরে মনে করা হতো নেপোলিয়নের সেনাদল এই ধ্বংসযজ্ঞ ঘঁটিয়েছিলো। কিন্তু পুরোনো কিছু স্কেচ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে আরো আগেই খসে গিয়েছিলো স্ফিংসের নাক।
৩. ১৯২২ সালে হাওয়ার্ড কার্টার ফারাও তুতেনখামেনের মমি আবিষ্কার করেন। ধরে নেয়া হয়েছিলো মমি এবং সমাধীর সব ধনসম্পদ অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে। কিন্তু পরে জানা যায়, তুতেনখামেনের সমাধী এর আগেই বেশ কয়েকবার লুট হয়েছিলো।
৪. প্রাচীন মিশরের নারী-পুরুষরা মুখে প্রসাধনী ব্যবহার করতো। শ্রেণি-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মেকআপ করাকে একটি ঐশ্বরিক এবং জাদুকরি ব্যাপার বলে মনে করতো। সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে, প্রাচীন মিশরীয়রা চোখে সুরমা ব্যবহার করতো কারণ এক ধরণের চোখের সংক্রমণ থেকে তা তাদের সুরক্ষা দিতো বলে বিশ্বাস করতো তারা।
৫. মিশরীয়রা মমি করার জন্য মরদেহের ভেতরের সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বের করে নিতো। কিন্তু হৃৎপিন্ড রেখে দেয়া হতো জায়গা মতো। মিশরীয়রা বিশ্বাস করতো মানুষের আবেগ অনুভূতি, স্মৃতি বা জ্ঞানের উৎস হচ্ছে হৃৎপিন্ড।
গবেষকদের মতে, প্রাচীন মিশরীয়রাই প্রথম ৩৬৫ দিনে বছর গণনা শুরু করেছিলো। Photo: Public Domain |
৬. গবেষকদের মতে প্রাচীন মিশরীয়রাই প্রথম ৩৬৫ দিনে বছর গণনা শুরু করেছিলো। ক্যালেন্ডার ধরে নীল নদ কখন প্লাবিত হবে তাও বের করার পদ্ধতি বের করেছিলো তারা। খ্রিস্টের জন্মের ৩ হাজার বছর আগেও মিশরীয় সমাজে ক্যালেন্ডারের ব্যবহার ছিলো।
৭. পিরামিড প্রাচীন যুগের সপ্তশ্চর্যগুলোর একটিই শুধু নয়, এটিই একমাত্র সপ্তাশ্চর্য যা এখনো টিকে আছে। পিরামিড নিয়ে একটি আরবি প্রবাদে বলা হয়েছিলো, মানুষ সময়কে ভয় পায় কিন্তু সময় ভয় পায় পিরামিডকে।
৮. বিড়ালকে পবিত্র মনে করতো প্রাচীন মিশরীয়রা। কোনো পরিবারের পালিত বিড়াল মারা গেলে শোক প্রকাশের জন্য পরিবারের সব সদস্যই ভুরু চেঁছে ফেলতো। অনেকে বিড়ালের মরদেহও মমি করে তা বিড়ালদের জন্য নির্মিত বিশেষ সমাধীতে সমাহিত করা হতো।
৯. মিশরিয় হায়ারোগ্লিফিক খোদাই করা ছিলো বেশ শ্রমসাপেক্ষ কাজ। যে কারণে শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে যেমন ফারাওয়ের সমাধীতে লেখার জন্য ব্যবহার করা হতো হায়ারোগ্লিফিক। আর সাধারণ কাজে ব্যবহার করা হতো হায়ারোগ্লিফিকের একটি সহজ রুপ হায়ারেটিক।
১০. গিজার গ্রেট পিরামিডটি মানুষের তৈরি সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থাপনাগুলোর একটি। ২৫ লাখ লাইম স্টোনের ব্লক দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই পিরামিডটি। এক একটি ব্লকের ওজন আড়াই টনেরও বেশি। আর গোটা পিরামিডের ওজন ৬৩ লাখ টনেরও বেশি।
পিরামিড প্রাচীন যুগের সপ্তশ্চর্যগুলোর একটিই শুধু নয়, এটিই একমাত্র সপ্তাশ্চর্য যা এখনো টিকে আছে। Photo: Public Domain |
১১. ফারাওদের মধ্যে অন্যতম দ্বিতীয় রামসেস সবচেয়ে বেশি দিন ক্ষমতায় ছিলেন। ৬০ বছর ধরে তিনি প্রাচীন মিশরীয় সামাজ্য পরিচালনা করেছেন। ৯০ বছর বয়সে মৃত্যুর আগে তিনি শতাধিক সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন বলে ধারনা করা হয়।
১২. ইনফ্রারেড থার্মোগ্রাফিসহ সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে গিজার গ্রেট পিরামিডের ভেতর উষ্ণ এবং অপেক্ষাকৃত শীতল দুটি জায়গা রয়েছে যেখানকার তাপমাত্রা বলেতে গেলে সবসময় প্রায় একইরকম থাকে। কিন্তু কি কারণে বা কিভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের এমন পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলো প্রাচীন মিশরীয়রা তা এখনো জানা যায়নি।
১৩. গিজার গ্রেট পিরামিডটি এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া একমাত্র আট পার্শ্বযুক্ত পিরামিড। এই পিরামিডের চারটি পার্শ্ব সামান্য অবতল। শুধুমাত্র উপর থেকে এবং বছরের বিশেষ একটা সময়ে দেখা যায় পিরামিডের আট পার্শ্ব।
১৪. ফারাও বলতে প্রাচীন মিশরীয় শাসকদের বোঝানো হলেও প্রথমে এই শব্দ দিয়ে বোঝানো হতো রাজা যে প্রাসাদে থাকেন সেই প্রাসাদকে।
১৫. একসময় মনে করা হতো যখন কোনো ফারাওয়ের মৃত্যু হতো তখন তার পরিবার, চাকরবাকর বা কর্মচারী সবাইকে একসাথে সমাহিত করা হতো। কিন্তু মাত্র কয়েকবার এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও বেশিরভাগ সময় শুধুমাত্র ফারাওকেই মমি করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হতো।
১৬. অবসরে বোর্ড গেম খেলা প্রাচীন মিশরীয়দের মাঝে বেশ জনপ্রিয় ছিলো। মেহেন বা মেনকালার মতো বেশ কিছু খেলা তৈরি করেছিলো মিশরীয়রা। খ্রিস্ট্রের জন্মের ৩ হাজার বছর আগে সেনেট নামে জনপ্রিয় একটি বোর্ডগেম তৈরি হয়েছিলো।
১৭. ফারাওরা ধাতুর তৈরি এক ধরনের দাঁড়ির প্রতিকৃতি পড়তো। তাদের বিশ্বাস ছিলো দেবতা ওসাইরিসের দাঁড়ির আদলে দাঁড়ি পরিধান করা পবিত্র কাজ।
স্ফিংসের নাক কিভাবে ভেঙ্গে গিয়েছিলো তা নিয়ে এখনো রহস্য রয়েছে। Photo: Public Domain |
১৮. জোতির্বিদ্যায় প্রাচীন মিশরীয়রা এগিয়েছিলো অনেক। গিজার গ্রেট পিরামিড তৈরি করা হয়েছিলো আকাশের কালপুরুষ মণ্ডলের অনুকরণে।
১৯. উদ্ভট কিছু আচরণ ফারাওদের স্বভাবসিদ্ধ ছিলো। অনেক ফারাও চাকরের শরীরে মধু মাখিয়ে দিতো যাতে মাছি তাদের ওপর বসে। ফারাওদের বিরক্ত না করে।
২০. অনেক দিন ধরেই মানুষের মধ্যে একটা ধারণা ছিলো পিরামিড বানানোর কাজে ফারাওরা দাসদের ব্যবহার করতো। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু আবিষ্কার থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে পিরামিড তৈরির জন্য সমগ্র মিশর থেকেই দক্ষ শ্রমিকরা আসতেন। আর কাজ করতে গিয়ে কারো মৃত্যু হলে সম্মান দেখিয়ে তাকে ফারাওয়ের পাশেই কবর দেয়া হতো।
বাংলায় দুর্দান্ত সব ভিডিও দেখতে আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন- Funny Frog Creatives
Post a Comment