বাক্সে বাক্সে বন্দি বাক্স, বাক্সে বাক্সে বন্দি বাসা/বাক্স দিয়ে বাক্স গড়া, বাক্সতে সব স্বপ্ন আশা...।
সংগীতশিল্পী অর্ণব শহরের উঁচু উঁচু
দালান আর ফ্ল্যাটকে তুলনা করেছেন বাক্সের সাথে। হ্যা বাক্সইতো! পৃথিবী ছোট হতে হতে
উবে গেছে উদ্যান, মাঠ, ময়দান। আগের মতো নেই বড় বাড়ি, আঙ্গিনা, উঠোন। নেই যৌথ সংসার। নেই এক বিশাল
উঠোনের চারকোণে চৌ-চালের নকশা করা ঘর-বৈঠকখানা। এখন হাতের মুঠোর মতো একখন্ড জমির
বুক ফুঁড়ে উঁচু হয়ে উঠছে আকাশ ছোঁয়া দালান-অট্রালিকা। এক দালানের খুপড়ি খুপড়ি ঘরে
নাগরিক মানুষের ঠাসাঠাসি বসবাস। পথ আর পথের পাশে দামি দামি শপিংমল, ব্র্যান্ডের গাড়ি, সাইরেনওয়ালা মোটরযানের সারি সারি পার্কিং। মেঠো পথের দ্বারে তরুবীথি -সে এখন
কল্পনা। তাই বলে কি সবুজ থাকবে না? রজনীগন্ধা ঘ্রাণ, হাসনাহেনার সুভাস, পাতাবাহারের গ্ল্যামার হারিয়ে যাবে?
ছাদ বা বারান্দায় শখের বাগান; কিছু বাস্তবতা ও করণীয়
বাড়ির খালি ছাদে অথবা
বারান্দায় বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ফুল, ফল,
শাক-সবজির বাগান এখন অনেকেই গড়ে তুলছেন শখের বশে অথবা
বৃক্ষপ্রেমের তাগিদে। অনেকেই নাগরিক ব্যস্ততার যান্ত্রিক পীড়ন থেকে দু’দন্ড শান্তি পেতে কিংবা সোঁদা মাটির গন্ধের টানে একটুকরো
সবুজ ছোঁয়ার আশায় বাড়ির ছাদ বা বারান্দায় শখের বাগান তৈরি করছেন। ছোট ছোট টবে
পুঁতে দিচ্ছেন বেল, বড়ইয়ের মতো গাছ বা
মাচা করে এলিয়ে দিচ্ছেন লাউ-ঝিঙ্গের ডগা। একটু ইচ্ছা আর সামান্য শ্রম দিলেই কিন্তু
আপনার বাড়ির ছাদ বা বারান্দাও হয়ে উঠতে পারে একখন্ড সবুজের আঙিনা।
ছাদে বাগান কোথায়-কিভাবে শুরু করবেন
বাড়ির ছাদ, বারান্দায় শখের বাগানটি তৈরি করেতে খুব বেশি প্রস্তুতি বা
সময়ের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন নেই দিস্তা দিস্তা পুস্তক বা নিয়ম-কানুন মুখস্ত করার।
আপনার মন যদি সবুজ ভালোবাসে, সবুজের টান বোধ করে
কিংবা জাম-জামরুলের বেঁচে থাকার আর্তি আপনাকে ব্যথিত করে তবে আপনার সে মনটাই
মুখ্য। মনটাকে প্রস্তুত করলে বাকি সব আপনাতেই হয়ে যাবে। বৃক্ষহীন নগরে আপনার বাড়ির
ছাদ বা বারান্দাটা যদি হয় একটা সবুজ বৃক্ষের ছোট্র উদ্যান তবে বেশ ভালো হয়।
ছাদে বাগান তৈরির সময় মনে রাখতে হবে
বাগানের জন্য ছাদের যেন কোন প্রকার ক্ষতি না হয়। এজন্য রোপনকৃত গাছের পাত্রগুলো
ছাদের বীম বা কলামের নিকটবর্তী স্থান বরাবর রাখতে হবে। পাত্র রাখার সময় খেয়াল
রাখতে হবে যেন এগুলো সরাসরি ছাদের উপর বসানো না হয়। এত ছাদ ড্যাম বা স্যাঁতস্যাঁতে
হয়ে যেতে পারে। তাই রিং-এর উপর বা ইটের উপর পাত্রগুলো স্থাপন করা শ্রেয়। তাতে
পাত্রের নিচ দিয়ে যথেষ্ট আলো বাতাস চলাচল করতে পারে এবং ছাদের কোন প্রকার ক্ষতি
হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
কোন গাছ নির্বাচন করবেন
অরণ্যে যেমন সব গাছ প্রকৃতির আলতো
হাতের ছোঁয়ায় মাতৃস্নেহে লালিত হয় ছাদে তেমনটি কষ্টসাধ্য। সব গাছ ছাদে পালন করাও
আমাদের দ্বারা সম্ভব হয় না। আঁশ জাতীয় কোনো গাছই ছাদে ভালো হয় না। ছাদে চাষ করার
জন্য বিশেষ কিছু গাছ নির্বচন করতে হয়। নানান জাতের আম, পেয়ারা, কুল, লেবু, আমড়া, করমচা, ডালিম, কমলা, মাল্টা, জামরুল ইত্যাদি খুব সহেজই ছাদে চাষ করা যায়। চাষ করতে পারি
আলো-পানির স্পর্শে বাড়ে এমন অনেক ফুলের গাছ।
গাছ কিভাবে লাগাবেন
সরাসরি মাটিতে গাছ লাগানো বা বাগান
করা আর ছাদে বাগান করার মধ্যে কিছু পার্থক্য মনে রাখতেই হয়। ছাদে গাছ লাগানোর জন্য
আলাদা কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা অপরিহার্য। যেমন-
ড্রামে/টবে গাছ লাগালে হাফ
ড্রাম/টবের তলদেশে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য ১ ইঞ্চি ব্যাসের ৫/৬টি ছিদ্র
রাখতে হবে। ছিদ্রগুলোর উপর মাটির টবের ভাঙ্গা টুকরো বসিয়ে দিতে হবে।
ড্রাম/টবের তলদেশে ইটের খোয়া বিছিয়ে
তার উপর কিছু বালি দেয়ার পর মাটি দিয়ে ভরাট করতে হবে।
সমপরিমাণ দোঁআশ মাটি ও পঁচা গোবরের
মিশ্রণ দিয়ে পাত্রটির দুই তৃতীয়াংশ ভরার পর হাফ পাত্র অনুযায়ী পাত্র প্রতি মিশ্র
সার আনুমানিক ৫০-১০০ গ্রাম প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে সম্পূর্ণ
পাত্রটি মাটি দিয়ে ভর্তি করা উত্তম। তার ১৫/২০দিন পর পাত্রটির ঠিক মাছখানে মাটির
বল (চাড়ার সাথে যে মাটির খন্ড) পরিমাণ গর্ত করে অতঃপর চারা বা গাছটি রোপন করা
ভালো।
রোপিত গাছটি একটি খুঁটি দিয়ে বেঁধে
দিলে বাতাসের আঘাতে গাছটি এলিয়ে পড়বে না।
প্রয়োজনীয় জল ও সার দিতে হবে সময়মত, পরিমাণ মাফিক।
আলো-বাতাস যেন সবসময় পাওয়া যায় তা
নিশ্চিত করাও জরুরি।
গাছের রোগ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
ছাদে বাগান করার পরিকল্পনা থাকলে সবার আগে প্রয়োজন একজন বৃক্ষ বিশেষজ্ঞের সাথে
সখ্যতা,
যেন, যে কোনো সময় যে কোন
গাছের অবস্থা ও পরিচর্যা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা যায়, পরামর্শ নেয়া যায়।
জোবায়ের মিলন
Post a Comment