ই-বুক বা ই-পেপারের ভবিষ্যত কি? যাদুঘরে যাচ্ছে কাগজে ছাপানো বই, সংবাদপত্র??


মিডিয়া মোঘল রূপার্ট মারডক আর ভরসা রাখতে পারছেন না কাগজে ছাপানো সংবাদপত্রের ওপর। তথ্য প্রযুক্তির উত্তরোত্তর উন্নতি আর এসবের প্রতি মানুষের আগ্রহ দেখেই বুঝি তার বিশ্বাস ২০ বছর পর বিশ্বে কোনো সংবাদপত্র আর কাগজে ছাপা হবে না। তবে তা হবে ইলেকট্রনিক সংবাদপত্র, ইলেকট্রনিক বই বা ই-বুকের আদলে। এমনকি, প্রযুক্তি প্রেমীদের চাহিদা মেটাতে এবং আগামী কয়েক শতাব্দী সংবাদপত্র, বই বা ম্যাগাজিনের বাজারে রাজত্ব করতে ইতোমধ্যেই মাঠে নেমেছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান।



ই-বুক বা ই-পেপারের ভবিষ্যত কি? যাদুঘরে যাচ্ছে কাগজে ছাপানো বই, সংবাদপত্র??


ই-বুক বা ই-পেপার ছাপতে কোনো ছাপাখানার প্রয়োজন হয়না। এর অক্ষরবিন্যাস থেকে শুরু করে রূপসজ্জা, অলংকরণ, প্রয়োজনীয় ছবি সংযোজন সবই সম্পাদন করা হয় শুধুমাত্র কম্পিউটারের মাধ্যমে। এর বিক্রয় বা সরবরাহও হচ্ছে অনলাইনে। বুক শেলফে গাদাগাদি করে বই রাখার প্রয়োজন নেই, নেই হারিয়ে যাওয়ার ভয়, ভিজে নষ্ট হওয়া বা উই পোকায় কাটার আশঙ্কা।

ই-বুক পড়ার জন্য পাঠকের প্রয়োজন হবে কম্পিউটার বা ল্যাপটপ, ই-বুক রিডার বা নতুন প্রযুক্তির স্মার্ট ফোন। তবে, সংবাদপত্র বা বই পড়ার জন্য বর্তমানে ই-বুক রিডারই বেশি জনপ্রিয়।

১৯৪৬ সালে রবার্ট বুসার পর ১৯৭১ সালে মাইকেল এস হার্টের প্রজেক্ট গুটেনবার্গে’র সফল উদ্যোগ ডিজিটাল বই বা ই-বুকের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে বিশ্ববাসীকে। ১৯৯২-৯৩ সালে ইনসিপিট নামের ই-বুক রিডার বাজারে আসার পর একে একে বাজারে আসে আরও বেশকিছু ই-বুক রিডার। ডিজিটাল বুক ইনক, বাইবেলোবাইটস, সি এন্ড এম, অ্যামাজনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসে ই-বই প্রকাশ আর অনলাইনে বাজারজাতকরণের কাজে। আর ২০০৭ এর পর ই-বইয়ের বাজার দখলে প্রতিযোগীতায় নামে অ্যামাজন, সনি, বুকিন, বার্নস এন্ড নোবল, অ্যাপল, কোবো ইনক, গুগলের মতো প্রতিষ্ঠান।

সাধারণ বই অপেক্ষা দামে সস্তা, কাগজের বইয়ের তুলনায় হালকা হওয়ায় সহজে বহনযোগ্য, কয়েক হাজার বই একটি ছোট্ট ডিভাইসে দীর্ঘকাল সংরক্ষণ করাসহ বেশ কিছু সুবিধাই কাগজে ছাপানো বইয়ের সাথে ই-বুকের মৌলিক পার্থক্য সৃষ্টি করেছে। এমনকি বইয়ের জন্য দোকান বা পাঠাগারে যাওয়ারও দরকার নেই। বিভিন্ন ওয়েবসাইটের ডিজিটাল বইয়ের বিশাল ভাণ্ডার থেকে সহজেই ডাওনলোড করে নেয়া যাচ্ছে পছন্দের এবং প্রয়োজনীয় সকল বই। শুধু তাই নয় হাল আমলের ই-বুক রিডারের সাথে যুক্ত ব্লু-টুথ, ওয়াইফাই, কার্ড রিডারের মতো প্রযুক্তি দুর্বার করে তুলছে ই-বুক রিডারের জনপ্রিয়তা।

শুধু সাধারণ পাঠকই নয়, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য ক্রমেই অপরিহার্য হয়ে উঠছে এসব ই-বই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এখন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যবইয়ের ডিজিটাল সংস্করণ সরবরাহ করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কাছে। বাংলাদেশেও প্রাথমিক ও নিম্নমাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই পাওয়া যাচ্ছে ই-বুকের আদলে।

ব্যবহারের সুবিধার কারণেই নয়, পরিবেশগত কারণেও বেড়ে চলছে ই-বুকের জনপ্রিয়তা ও চাহিদা। ই-বুকের প্রসারের ফলে বেঁচে যাবে লক্ষ লক্ষ টন কাগজ অর্থাৎ অসংখ্য গাছ, আর রক্ষিত হবে পরিবেশের ভারসাম্য। যে কারণে অনায়াসেই বলা যায় সে দিন আর খুব বেশি দুরে নয় যে দিন কাগজের বই আর সংবাদপত্রের স্থান হতে চলেছে যাদুঘরে।



আটপৌরে ডেস্ক

0/Post a Comment/Comments

Previous Post Next Post