রোগজীবানুর সংক্রমণ প্রতিরোধ করুন, দৃষ্টি দিন রসুইঘরের দিকে



আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ রান্নাঘরকে বাড়ির বাইরের কোন ঘর মনে করে। দেখা যায় রান্নাঘরের বাড়তি যত্ন নেয়া তো দূরের কথা রান্নার পর ঠিকমতো পরিস্কারও করে না। হাইজেনিকের ব্যাপারে বেশিরভাগই খেয়াল রাখে না। আসলে বিষয়টি হওয়ার কথা একদম উল্টো। একটি বাসার সবচেয়ে সুন্দর ও হাইজেনিক স্থান থাকবে রান্নাঘর। কেননা এর সাথে জড়িয়ে আছে পুরো পরিবারের স্বাস্থ্য ও সুন্দর জীবনযাপন। আসলে রান্নাঘর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা পরিবারের প্রতিটি সদস্যর প্রধান ও অন্যতম দায়িত্ব। কাজটি জটিল মনে হলেও একেবারেই তা নয়। তবে রান্নাঘর বলতে শুধু মেঝে, দেয়াল বা চুলা নয় পরিস্কার রাখতে হবে বিভিন্ন গেজেট থেকে শুধু করে তৈজস পত্রও।



৯৫ ভাগ রোগজীবানুর সংক্রমণ প্রতিরোধ করুন, দৃষ্টি দিন রসুইঘরের দিকে



পরিস্কার রাখুন সিংক

রান্নাঘরের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় স্থান হচ্ছে সিংক। রান্নার আগে বা পরে সব সময় সিংক ব্যবহার করে পরিবারের সদস্যরা।তাই যে কোন কাজের পরে সিংক পরিস্কার রাখতে হবে। গুড়া সাবান বা লিকুইড সোপ দিয়ে ভালোভাবে সিংক পরিস্কার করতে হবে। মাছ-মাংস বা তেল চর্বি জাতীয় দ্রব্য ধোয়ার পর সামান্য গরম পানিতে গুড়া সাবান মিশিয়ে সিংক ও তার আশপাশ ভালোভাবে পরিস্কার করতে হবে। সম্ভব হলে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিন। এতে সিংক মরচে ধরার সম্ভাবনা থাকবে না।

অনেক বাসায় বাসন কোশন, সবজি ধোয়ার কাজ হয় নিচু স্থানে। এক্ষেত্রে কাজ শেষে কলতলা ভালোভাবে ধুয়ে রাখতে হবে। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন এন্টি ব্যাকটেরিয়াল লিকুইড দিয়ে মেঝে পরিস্কার করে গরম পানি ঢালুন।কেননা এমন নিচু স্থানে পোকা মাকড়ের আক্রমণ দ্রুত হয়। আর এসব পোকা মাকড় সহজেই খাদ্যদ্রব্যে রোগ জীবানু ছড়ায়। আর সম্ভব হলে নিচু স্থানে খাদ্যসামগ্রী ধোয়ার কাজ না করাই ভালো।


রান্নাঘরে প্রবেশ করেত দিন পর্যাপ্ত আলো-বাতাস

রান্নাঘরে যেন পর্যাপ্ত আলো বাতাস থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা প্রাকৃতিক উৎস থেকে পাওয়া আলো বাতাসে রান্না ঘরের প্রতিটি জিনিস ভালো থাকে। তবে খাবার রাখার স্থানে সরাসরি রোদের আলো না লাগাই ভালো। এতে খাবার নস্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমন ক্ষেত্রে রান্নাঘরের জানালায় অর্ধেক করে পর্দা লাগাতে পারেন।এছাড়া রান্না ঘরের এককোণায় রেখে দিন ইনডোর প্লান্ট। এতে ঘরের অক্সিজেনের ঘাটতিও দূর হবে।দেখতেও ভালো লাগবে।


মেঝে ও দেয়াল পরিস্কার রাখুন

কাটা কুটির পর অবশ্যই আর্বজনা পরিস্কার করে ফেলুন। যারা মেঝেতে বসে কাটাকুটি করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তাদের জন্য বাড়তি ঝামেলা হলো সবজির খোসা পরিস্কার করা। এখন বাজারে নানা আৃকতির প্লাস্টিকের পণ্য পাওয়া যায়, যার উপর রেখে অনায়াসে কাটাকুটি করা যায়। এতে মাটি থেকে সবজির খোসা তোলার ঝামেলা থাকে না। আর যারা চপিং বোর্ড ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রেও সবজি বা যে কোন কিছু কাটতে গেলে অনেক সময় দেয়ালে দাগ লাগার সম্ভাবনা থাকে। তাই কাটাকুটির ঝামেলা শেষ করার পর অবশ্যই মেঝে ও দেয়াল ভালো ভাবে মুছে নিন। মেঝে মাঝে মাঝে ভিনেগার দিয়ে পরিস্কার করলে মেঝে চকচকে থাকবে। আজকাল বেশির ভাগ বাসায় রান্না ঘরের দেয়াল ও মেঝে টাইলস-এর । এক্ষেত্রে পরিস্কার করার জন্য বাড়তি ভোগান্তি পোহাতে হবে না।




ফ্রিজ পরিস্কার রাখুন

মাসে একবার ফ্রিজ পরিস্কার করুন। মাছ মাংস বা যেকোন খাবার দীর্ঘদিন রাখতে প্লাস্টিকের ব্যাগে না রেখে বরং বক্সে করে রাখলে ভালো হয়। এতে খাবারের গুণগত মান ঠিক থাকে। তবে ফুড গ্রেইন ব্যাগেও রাখতে পারেন। ফ্রিজ দূর্গন্ধমুক্ত রাখতে এক টুকরো লেবু কেটে ফ্রিজে রেখে দিন। এছাড়া আদা রসুন ও পেয়াজের মতো মশলা বক্সে ভরে রাখলে ফ্রিজ দুর্গন্ধ হবে না। ফ্রিজে কোনো খাবারই খোলা রাখবেন না। এতে খাদ্রে ব্যকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটতে পারে।


বন্ধ করুন পোকামাকড়ের উপদ্রব

পোকা মাকড়ের উপদ্রব থেকে রান্নাঘরকে মুক্ত রাখতে ঘরের এক কোণা তুলসি পাতার গাছ রাখতে পারেন এতে মশা মাছির উপদ্রব কম হবে। তেলাপোকা শুধু যে অস্বস্তিকর তা নয় এটি একই সাথে জীবানু বহনকারী। তাই সিংক বা মেঝে পরিস্কারের পাশাপাশি মাঝে মাঝে তেলাপোকা মারার ওষুধ ব্যবহার করুন। বাজারে অনেক ধরণের তেলাপোকার ওষুধ পাওয়া যায়। এসব ব্যবহারের পাশাপাশি ফুটন্ত গরম পানিতে কাপড় কাচার সোডা মিশিয়ে নালায় ঢালুন। তেলাপোকা মরে যাবে।পিপড়ার যেন সবচেয়ে পছন্দের স্থান রান্নাঘর। সেক্ষেত্রে চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার যেন না পড়ে থাকে সেজন্য এসব খাবারের কনটেইনার শক্ত করে লাগিয়ে রাখতে হবে।
  


তাহমিনা তাসির


0/Post a Comment/Comments

Previous Post Next Post