অনুর কোলজোড়ে আসা নতুন অতিথির জন্য শীতের প্রস্তুতির কমতি নেই তার পরিবারে।
কাঁথা, কম্বল, তোয়ালে, নতুন বাবুর গরম কাপড়, সরিষার তেল কি নেই। কিন্তু তারপরও যে কোনো
সময় অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে শিশুটি। আক্রান্ত হতে পারে নিউমোনিয়া, ইনফেকশন ও ডায়ারিয়ার
মতো রোগে। তাই নতুন শিশুর জন্য বাড়তি কিছু যত্ন ও সতর্কতা মেনে চলা খুব জরুরী। বিশেষ
করে জন্মের পর থেকে ৬ সপ্তাহ বয়সী শিশুদের জন্য শীতের শুরু বা পুরো শীতকালই একটু বাড়তি
সতর্কতা জরুরী।
এই শীতে নবজাতকের বাড়তি যত্ন
শীতকালে শিশুদের ভালোভাবে গরম কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন। ঘরের ভেতর বা বাইরে
যেখানেই শিশু থাকুক না কেন পর্যাপ্ত গরম কাপড় যেমন সোয়েটার, মোজা, টুপি পড়িয়ে রাখুন।
অনেকে মনে করতে পারেন, শিশুরা ঘন ঘন ঘামে, তাই গরম কাপড়ের প্রয়োজন নেই। বিষয়টি একেবারে
ভুল। যখন শিশু ঘামবে তখন কাপড় খুলে দিন বা হালকা কাপড় পড়ান। কিছুক্ষণ পর আবারো গরম
কাপড় পড়িয়ে দিন। আর বাইরে গেলে তো কথাই নেই। পর্যাপ্ত গরম কাপড়ের পাশাপাশি তোয়ালে দিয়ে
শিশুকে জড়িয়ে রাখুন।
শিশুর অনুভূতিকে বোঝার চেষ্টা করুন। বিষয়টি একটু কঠিন নতুন মায়ের পক্ষে।
কেননা ওরাতো সমস্যার কথা বলতে পারে না। তাই ওদের মুখ অভিব্যক্তি ও হাত পায়ের নড়াচড়া
দেখে বুঝে নিতে হবে ওদের ভাষা। যেমন নবজাতকের গাল লাল দেখে ভেবে নিবেন না যে ওদের ঠান্ডা
লাগছে বরং ওরা ঘেমে গেলে গাল লাল হয়ে উঠে। আবার বিবর্ণ রং দেখে ওরা স্বাভাবিক রয়েছে
ভাবার কারণ নেই যে ওদের ঠান্ডা লাগছে বলেই ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে। অনেক সময় শিশুরা অদ্ভূত
আচরন করে। সেক্ষেত্রে তারা কান্না কাটি করে না। তখন অবশ্যই ওদের ন্যাপি বদলে দিতে হবে
বা খাওয়াতে হবে।
আমাদের দেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠী শিশুদের গরম রাখার জন্য মাটির হাড়িতে কাঠ
কয়লা জ্বালিয়ে ওদের তাপ দেয়ার চেস্টা করে। যা শিশুর জন্য বিপদজনক। কেননা কাঠ কয়লা,মাটির
বা গ্যাসের চুলা, থেকে কার্বন নিঃসরণ হয়। যা শিশুর ত্বক ও চোখের জন্য ক্ষতিকর। তাই
এসব জিনিসের কাছাকাছি শিশুকে রাখবেন না।
নবজাবকরা বড়দের মত শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাই শীতের
এই সময়ে তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে বেশি প্রভাবিত হয় ওরা। তাই ওদের এমন একটি পরিবেশে
রাখেতে হবে বিশেষ করে শীতকালে যাতে ওরা স্বাভাবিক বোধ করে। নবজাতকের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা
হচ্ছে ১৬ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আপনি যদি শিশুর ঘরে হিটার ব্যবহার করতে চান সেক্ষেত্রে
থার্মোমিটার রাখুন ঘরের তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য। যাতে ঘর বেশি গরম হয়ে না যায়।
শীত নিবারনে শিশুদের বেশি কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখা উচিত নয়। বাইরে বের হওয়ার
সময় অবশ্যই হাত ও পা মোজা সেই সাথে টুপি পড়িয়ে নিন।
শিশুদের অবশ্যই নরম সুতি কাপড়ের পোশাক পরাতে হবে। অন্য ফেব্রিকসের কাপড়ে
শিশু কখনোই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে না। শিশুর ত্বক এমনিতেই সংবেদনশীল, তাই সুতি কাপড়ে
শিশুর সংবেদনশীল ত্বক ভালো থাকে। তবে, ফেলালিনের কাপড় শীতকালের জন্য বেশ উপযোগী। সেক্ষেত্রে
শিশুদের এসব ফেব্রিকস এর পোশাক পড়ানো ভালো।
নবজাককের রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতা কম থাকে, বলা যেতে পারে থাকেই না। তাই যেকোন
ভাইরাস ওদের তাড়াতাড়ি আক্রমণ করে। আর শীতকালে সর্দি কাশি, ইনফেকশনের মতো জীবনু বাতাসে
বেশি ঘোরে ,এতে শিশুরা দ্রুত আক্রান্ত হয়।
শূন্য থেকে ৬ সপ্তাহের শিশুদের শরীরের স্বাভাবিক তামপাত্রা ৩৬.৪ ডিগ্রি
থেকে ৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর বেশি হলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে শিশুকে নিয়ে যান।
এই সময়ের শিশুরা কাশির রোগে মারাত্নক রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। এই অবস্থায়
ওদের প্রতি বাড়তি যত্ন নিন ও সচেতন থাকুন।
শিশু যখন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে খাওয়া কমিয়ে দেয়, এটাও ভাল লক্ষণ নয়। এমনটি
ঘটলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
তাহমিনা তাসির