ভূমিকম্প হলে যা করবেন, যা ভুলেও করবেন না


ভূমিকম্প হলে যা করবেন তা নিয়ে প্রস্তুতি নেয়ার সময় হয়েছে এখনই? কারণ সম্প্রতি ভূমিকম্প নিয়ে সবার মাঝে বেড়েছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। প্রয়োজন হয়ে পড়েছে ভূমিকম্প নিয়ে সচেতন হওয়ার, ঝুঁকি আর ক্ষতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নেয়ার। আটপৌরে পাঠকদের জন্য থাকছে ভূমিকম্প মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে বিশেষ টিপস।



ভূমিকম্প কবে, কখন এবং কত শক্তিতে আঘাত হানবে তা যেহেতু আগে থেকে জানা সম্ভব হয় না, সে জন্য ভূমিকম্প মোকাবিলায় আগে থেকেই কিছু প্রস্তুতি অবশ্যই নিয়ে রাখুন।

ভূমিকম্পের আগের প্রস্তুতি


১. ভূমিকম্প হলে আপনার বাড়ির ভেতরে ও বাইরে কোথায় কোথায় নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারবেন তা এখনই চিহ্নিত করে রখুন। এতে করে ভূমিকম্পের সময় আশ্রয়ের খোঁজে মূল্যবান সময় নষ্ট না হয়। বাড়ির ছোটদের এই বিষয়টি ভালোভাবে বুঝিয়ে দিন।

২. মাঝেমাঝে সবাই মিলে দৌড়ে বাড়ির বাইরে বের হওয়ার মহড়া দেয়ার চেষ্টা করুন। যাতে কম্পন অনুভূত হলেই সবাই এক দৌড়ে বাড়ির বাইরে বের হয়ে যেতে পারেন।

৩. বাড়ির লোকের পাশাপাশি প্রতিবেশী ও এলাকাবাসীর সাথেও এ বিষয়ে আলোচনা করুন, সচেতন করুন,  যাতে আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে সবাই মিলে ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পারেন।

৪. ঘরে আসবাব ও অন্যান্য মালপত্র কোথায় রাখছেন তা নিয়ে চিন্তা করুন। ভারী মালপত্র উপরে না রেখে শেলফের নিচের দিকে রাখুন। ঝাঁকুনিতে এগুলি যাতে গায়ের ওপর না পড়ে যায়।

৫. গ্যাস বা পানির লাইন, বৈদ্যুতিক লাইন নিয়মিত পরক্ষা করুন। লিক থাকলে মেরামত করে নিন।

৬. শুকনো খাবার, পানি ও জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসার কিছু সরঞ্জাম সবসময় হাতের কাছে রাখার চেষ্টা করুন।

৭. দেয়াশলাই, মোমবাতি বা টর্চ হাতের কাছে রাখুন।

৮. ভুলেও মোবাইল ফোন হাতছাড়া করবেন না।

৯. সম্ভব হলে বাড়ির সবার জন্য ‘হেলমেট’ রাখতে পারেন। বালিশ, কম্বল বা বিছানার তোষক ভূমিকম্পের সময় আপনাকে বাড়তি নিরাপত্তা দিতে পারে।

১০. বাড়ির দেয়াল বা মেঝেত সামান্য ফাঁটল থাকলেও সংশ্লিষ্টদের জানান, ব্যবস্থা নিন, অন্যথায় এই সামান্য ফাঁটলই আপনার মৃত্যু ফাঁদ হয়ে উঠতে পারে।



ভূমিকম্প হলে যা করবেন, যা ভুলেও করবেন না

ভূমিকম্পের সময় ঘরের ভেতরে থাকলে যা করবেন


১. ভূমিকম্পের সময় সর্বপ্রথম আপনাকে যা করতে হবে, তা হলো মাথা ঠান্ডা রাখা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘর থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করুন।

২.  রেডক্রসের পরামর্শ অনুযায়ী- ভূমিকম্পের সময় সবচেয়ে উত্তম পন্থা হলো, ‘ড্রপ-কাভার-হোল্ড অন’ পদ্ধতি। অর্থাৎ কম্পন শুরু হওয়ার সাথে সাথে মেঝেতে বসে পড়ুন, তারপর কোনো শক্ত কিছু, যেমন- টেবিল, ডেস্কের নীচে ঢুকে কাভার নিন, উপায় না থাকলে খাটের নিচে আশ্রয় নিতে পারেন। তবে চেষ্টা করুন খাটের পাশে কোনো জায়গা বেছে নিতে।

৩. আপনার মাথা সবচেয়ে নমনীয় অঙ্গ। যেভাবেই হোক মাথা বাঁচানোর কথা আগে ভাবুন। বালিশ বা কম্বল মাথার ওপর দিতে পারেন। কোনো কিছু না থাকলে হাত মাথায় ধরে থাকুন।

৪. বড় সোফা, ওয়াড্রোবের পাশে আশ্রয় নিতে পারেন। ঘরের ছাদ ধসে পড়লে এগুলোই আপনাকে বাঁচিয়ে দিতে পারে।

৫. আশ্রয় নেয়ার মতো আসবাবপত্র না পেলে ঘরের ভেতরের দিকের দেয়ালের পাশে গুটিশুটি হয়ে বসে আশ্রয় নিতে পারেন। বাইরের দিকের দেয়াল বিপজ্জনক।

৬. বাসার একেবারে ভিতরের দিকের রুমে না থেকে বাইরের দেয়ালের কাছাকাছি আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করুন। এতে সবকিছু ভেঙ্গে পড়লেও, বাইরের দেয়াল ভেঙ্গে উদ্ধার করা সহজ হবে।

৭. রাতে ঘুমুনোর সময় ভুমিকম্প হলে আতংকগ্রস্ত না হয়ে গড়িয়ে মেঝেতে নেমে যান। চেষ্টা করুন বিছানাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কুন্ডলি পাকিয়ে শুয়ে পড়তে।

৮. জানালার কাচ, আয়না, হালকা আলমারি বা  দেয়ালে ঝুলানো যে কোনো বস্তু থেকে দূরে থাকুন।



৯. আপনি যে ঘরে আছেন সে ঘরটি যদি কলাম ও বিমের তৈরি ভবন হয়, তাহলে কলামের গোড়ায় আশ্রয় নিন।

১০. চেষ্ট করুন দ্রুত বৈদ্যুতিক ও গ্যাসের সুইচ বন্ধ করে দিতে।

১১. বহুতল ভবনের কোনো তলায় থাকলে ঘরের ভেতরে থাকাই ভালো।

১২. ভূমিকম্পের সময় নিচে নামতে চাইলে কোনোভাবেই লিফট ব্যবহার করবেন না। সিঁড়ি দিয়ে ধীরেসুস্থে নামুন।

১৩. ভূমিকম্পের সময় কখনই সিঁড়িতে আশ্রয় নেবেন না। অনেকসময় ভূমিকম্পে বিল্ডিং ভেঙ্গে না পড়লেও সিঁড়ি দ্রুত ভেঙ্গে পড়ে।

১৪. প্রথম ঝাঁকুনির সময় ঘর থেকে বের হয়ে আসার সময় কোনো কিছু সাথে নেয়ার জন্য অযথা সময় নষ্ট করবেন না।

১৫. আতংকগ্রস্ত হয়ে কোনোভাবেই বারান্দা বা জানালা দিয়ে নিচে লাফিয়ে পড়ার চেষ্টা করেবন না।

১৬. প্রথমবার ভূমিকম্পের পরপরই আরেকটা ছোট ভূমিকম্প হয় যেটাকে ‘আফটার শক’ বলে। যে কারণে আফটার শক না চলে যাওয়া পর্যন্ত সাবধানে নিরাপদ স্থানে থাকুন।


ভূমিকম্পের সময় ঘরের বাইরে থাকলে যা করবেন


১. বহুতল ভবন বা বিলবোর্ড ইত্যাদির নিচে কোনোভাবেই আশ্রয় নিবেন না।

২. খোলা জায়গা বিশেষ করে খোলা মাঠ আশ্রয় নেয়ার জন্য সবচে’ উপযুক্ত।

৩.  বড় গাছ, লাইটপোস্ট বা বৈদ্যুতিক তারের পোলের নিচে কোনো অবস্থাতেই দাঁড়াবেন না।

৪. রাস্তায় অযথা ছুটোছুটি করবেন না। মাথার ওপর কাচের টুকরো, ল্যাম্পপোস্ট অথবা বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

৫. ভূমিকম্প একেবারে শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করবেন না।




ভূমিকম্পের সময় চলমান গাড়িতে থাকলে যা করবেন


১. গাড়ি সাথে সাথে থামিয়ে দিন। খোলা জায়গা দেখে গাড়ি পার্ক করার চষ্টা করুন।

২. সম্ভব হলে ভূমকম্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত গাড়ির ভেতরেই আশ্রয় নিন।

৩. গাড়ি কোনোভাবেই বহুতল ভবন, ফ্লাইওভার বা বড় বিলবোর্ডের নিচে রাখবেন না।

৪. ব্রিজ ও ফ্লাইওভারের ওপর গাড়ি না থামিয়ে দ্রুত সেস্থান থেকে নেমে পড়ুন। নিরাপদ জায়গা খুঁজুন।

৫. নদী বা পুকুরের পাড় ঘেঁষে গাড়ি রাখবেন না। যে কোনো সময় পাড় ধসে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

ভূমিকম্পের পরে যা করবেন


১. বড় ভূমিকম্পের পর আফটার শকের জন্য প্রস্তুত থাকুন। আফটার শক কয়ক ঘন্টা থেকে এক সপ্তাহ বা কখনো কথনো এক মাসের মধ্যেও আসতে পারে।

২. ঘরের ভেতরে থাকলে কম্পন শেষ হলে তাড়াহুড়ো না করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে শান্তভাবে ঘরের বাইরে বের হয়ে আসুন।

৩. ভূমিকম্পে বিল্ডিংয়ে দৃশ্যত কোনো ক্ষতি দেখা না গেলেও অনকসময় ভীত দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তাই ঘরে ঢোকা বা বের হওয়ার সময় অবশ্যই সতর্ক থাকুন। প্রয়োজনে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন।

৪. ভূমিকম্পের পর ঘরের ভেতরে ঢুকে প্রথমেই পরীক্ষা করুন, মাথার ওপর কোনোকিছু ঝুলে কিংবা হেলে আছে কি না।

৫. অবশ্যই পরীক্ষ করুন গ্যাসের চুলা আর লাইন।

৬. কোনো বৈদ্যুতিক জিনিস ব্যবহারের আগে লাইন ঠিক আছে কি না পরীক্ষা করে দেখুন।



নুসরাত শাহপার তুবা


Previous Post Next Post