প্রকৃতির বৈচিত্রময় ভূগঠনের একটি
অসাধারণ রুপ হচ্ছে পাহাড়-পর্বত। পর্বতের অপরীসীম সৌন্দর্য মানুষকে
যেমন কাছে টানে, তেমনি কিছু কিছু পর্বত ঘিরে গড়ে উঠেছে রহস্যের জাল, আবার কিছু
রয়েছে মানুষের ধরা ছোয়ার বাইরে। বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় ৫টি পর্বত নিয়ে থাকছে এই প্রতিবেদন।
বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর ৫টি পর্বতের ব্যাখ্যাতীত রহস্য
কালো পর্বত
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে
রয়েছে কুখ্যাত ব্ল্যাক মাউন্টেইন বা কালো পর্বত। কুকটাউন থেকে ২৫ কিলোমিটার
দক্ষিণে কালো পাহাড়টি স্থানীয়দের কাছে রহস্যময় হয়ে আছে নানা কারণে। এই পর্বতে
ছড়িয়ে আছে অজস্র গ্রানাইট পাথরের বোল্ডার, যেগুলির কোনোটির আকার বাড়ির সমান।
বোল্ডারগুলোর ফাঁকে মাটি না থাকায় তৈরি হয়েছে গোলকধাঁধার মতো পথ। স্থানীয়দের
দাবি অনুযায়ী এই পর্বতটিতে রাতের বেলা অদ্ভুত ছায়া শরীরদের ঘুরতে দেখা যায়। অসংখ্য
মানুষ এই পর্বতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি বলেও বিশ্বাস করেন তারা। বাস্তবিকই, কোনোরকম
চিহ্ন ছাড়াই এই পর্বতে হারিয়ে গেছে বহু মানুষ এবং তাদের খুঁজতে যাওয়া অনেক দল। যে
কারণে এই পর্বত পরিচিত মাউন্টেইন অব ডেথ বা মৃত্যু পর্বত নামে। জনশ্রুতি আছে, প্রায়ই
নাকি এখানে এক চিকিৎসকের ভূতকে দেখা যায়। এছাড়া, এই পর্বতের ওপর দিয়ে উড়ে
যাওয়ার সময় বিমানের কম্পাস ঠিকমতো কাজ করেনা বলেও বিশ্বাস করা হয়। এমনকি,
পশুপাখিরাও ওই পর্বত এড়িয়ে চলতে চায় বলে দাবি করেছেন বহু মানুষ।
কাংটেগা চূড়া
নেপালের হিমালয় পর্বতমালার একটি
চূড়ার নাম কাংটেগা যা দ্যা স্নো স্যাডল নামেই বেশি পরিচিত। এই চূড়ার উচ্চতা ২২
হাজার ২৫১ ফুট। ১৯৬৩ সালে এডমান্ড হিলারির নেতৃত্বে একদল অভিযাত্রী প্রথম এই চূড়ায়
উঠতে সক্ষম হয়। কাংটেগা চূড়া নিয়ে রহস্য ঘনিয়েছে মূলত গুগল আর্থের ছবি থেকে যেখানে
এই চূড়ার একটি অংশ কালো রং দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এটি দেখার পর থেকে অনেকেই বলতে
শুরু করেন এখানে ভিনগ্রহবাসীদের গোপন কোনো ডেরা আছে নয়তো এটি গোপন কোনো গবেষণাগার
যেখানে ভবিষ্যত প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। অবশ্য, এর পেছনে যুক্তি হচ্ছে,
জায়গাটি রয়েছে চূড়ায় উঠার একমাত্র পথ থেকে অনেক দূরে এবং শুধুমাত্র আকাশ থেকেই
সেখানে অবতরণ করা সম্ভব। তবে, অনেকের মতে এটি গুগল আর্থের কোনো ত্রুটি ছাড়া আর
কিছুই নয়।
নিষিদ্ধ পর্বত
উত্তর মঙ্গোলিয়ার খেন্তি প্রদেশে
রয়েছে খেন্তি পর্বতমালা। এখানকার একটি পবিত্র পর্বত বুরখান খালদুনেই দ্যা গ্রেট
চেঙ্গিস খানের জন্ম হয়েছিলো বলে বিশ্বাস করা হয়। তার সমাধীও খেন্তি পর্বতমালার
কোথাও লুকোনো আছে বলে মনে করা হয়। তবে প্রকৃত কারণটি জানা না গেলেও, এই পর্বতমালা
বিগত ৮শ' বছর ধরে সাধারণের জন্য নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছে। পর্যটক প্রবেশ তো দূরের
কথা, কোনো ধরনের গবেষণা বা প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণও নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে সরকারি
নির্দেশে। বিশ্বাস করা হয়, মৃত্যুর পর এই পর্বতের কোথাও চেঙ্গিস খানকে গোপনে
সমাহিত করা হয়েছিলো। তার সমাধী গোপন রাখার জন্য সমাধী নির্মাতা সবাইকেই হত্যা করা
হয়েছিলো। আর সমাধীর চারপাশে বিশাল এলাকা জুড়ে তৈরি করা হয়েছিলো কৃত্রিম বন। সরকারি
নিষেধাজ্ঞা তো বটেই, অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে এবং চেঙ্গিস খানের সমাধী সুরক্ষিত রাখতে
ডারখাদ নামে অভিজাত এক গোত্রের লোকেরা অতীতের মতোই পাহারা দিচ্ছে এই পর্বতমালা।
মুন্ডুহীন মানুষের উপত্যকা
কনাডার ম্যাকেঞ্জি পর্বতমালার
একটি অংশ হচ্ছে নাহান্নি ন্যাশনাল পার্ক। এই পার্কটিই মুন্ডুহীন মানুষের উপত্যকা
নামে বেশি পরিচিত। হাজার বছর ধরে এই এলাকাটি অভিশপ্ত এবং এখানে শয়তানের বাস রয়েছে
বিশ্বাস করে বহু গোত্র এড়িয়ে চলেছে এই জায়গাটি। বলা হয়, রহস্যময় অনেক প্রাণীর বাস
রয়েছে এই উপত্যকার গভীর জঙ্গলে। সেইসাথে হিংস্র নাহা গোত্রের মানুষদের কারণেও ওই
এলাকায় প্রবেশ করতে ভয় পায় সাধারণ মানুষ। উনিশ শতকের দিকে অন্য একটি উপজাতির একটি
গোটা দল হারিয়ে গিয়েছিলো এই এলাকায়। বলা হয়, নাহা গোত্রের হাতেই খুন হয়েছিলো সবাই।
এছাড়া, রহস্যময়ভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার অনেক ঘটনাই ঘটেছে এখানে। ১৯৬৯
সাল পর্যন্ত ৪৪ জন মানুষ এই এলাকায় রহস্যময়ভাবে নিখোঁজ হয়ে যায়। স্থানীয় বহু
মানুষ দাবি করেছেন, রাতের বেলা ওই এলাকার আকাশে অদ্ভুত আলো দেখতে পেয়েছেন তারা। আর
জঙ্গলের গাছ পালার আড়ালে মানুষসদৃশ প্রাণীদেরও দেখেছেন অনেকেই।
ডিয়াটলভ গিরিখাদের রহস্য
১৯৫৯ সালে সাইবেরিয়ার কুখ্যাত
ডিয়াটলভ গিরিখাদে স্কি করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলো ৯ জন রাশিয়ান তরুন।
পরে যখন তাদের খুঁজে পাওয়া যায়, তা যেমন ছিলো একদিকে ভয়াবহ, অন্যদিকে
ব্যাখ্যাতীত রহস্যময়। দুই সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ থাকার পর ওই দলের অনুসন্ধানে যায়
উদ্ধারকর্মীরা। ফেব্রুয়ারির ২৬ তারিখে অভিযাত্রীদের ক্যাম্পের সন্ধান পায়
অনুসন্ধানকরীরা। তাদের তাবুটি ছিলো খোলা এবং ভেতরের জিনিসপত্র সবকিছুই ছিলো
ঠিকঠাক। তাবু থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে একটি বিশাল সিডার গাছের নিচে নিভে যাওয়া
অগ্নিকুন্ডের পাশেই পাওয়া যায় দুজনের হিমায়িত হয়ে যাওয়া মৃতদেহ। অন্তর্বাস ছাড়া আর
কিছুই ছিলোনা তাদের গায়ে। এদের থেকে ৩২০ মিটার দূরেই পাওয়া যায় ওই অভিযানের
পরিকল্পনাকারী ইগোর ডিয়াটলভের মৃতদেহ। তার থেকে ১৮৩ মিটার দূরে চার ইঞ্চি বরফের
নিচে জিনা নামে আরেক তরুনী এবং তার থেকে ১৫০ মিটার দূরেই পাওয়া গিয়েছিলো আরেকজনের
মৃতদেহ। তাদের মৃতদেহ এমনভাবে পড়েছিলো যাতে মনে হয় তারা বুকেহেটে তাবুতে ফেরার
চেষ্টা করছিলো। এর প্রায় দু মাস পর বাকি দুজনেরও মৃতদেহ
খুঁজে
পাওয়া যায়। ১৫ ফুট বরফের তলায় অগভীর এক গর্তের ভেতর ছিলো তাদের মৃতদেহ।
তাদের সবাইকেই পাওয়া গিয়েছিলো হাড়গোড়
ভাঙ্গা অবস্থায় যদিও শরীরে কোনো ধরনের ক্ষতচিহ্নই পাওয়া যায়নি। এমনকি
তাদের কাপড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তেজস্ক্রিয়তা ধরা পড়েছিলো। প্রাথমিক তদন্তে
জানানো হয়েছিলো, হাউপোথার্মিয়ায় মৃত্যু হয়েছিলো সবার। কিন্তু পরে, এই রহস্যময় ঘটনা
নিয়ে নানা ধরনের ধারণা গড়ে উঠতে থাকে। তুষার ধস বা গোপন সামরিক পরীক্ষা, এমনকি
রাশিয়ার ইয়েতির আক্রমনে এদের মৃত্যু হয়েছিলো বলে প্রমাণ দেখাতে
শুরু করেন অনেকে। অনেকে বলতে শুরু করেন, অ্যালিয়েনদের হাতে পড়ে মৃত্যু হয়েছিলো ওই
দলের সদস্যদের। অবশ্য, কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি অনুযায়ী, ওই দিন
রাতে ডিয়াটলভ গিরিখাদ থেকে
৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে হাইকিং করার সময় উত্তর দিকের রাতের আকাশে উজ্জ্বল কমলা রঙয়ের
বেশ কিছু গোলক দেখতে পেয়েছিলেন তারা। কিন্তু ডিয়াটলভ গিরিখাদের রহস্যময় ওই ঘটনার
এতদিন পরেও সত্যিকারে কি ঘটেছিলো সেখানে তা নিয়ে রয়ে গেছে ব্যাখ্যাতীত রহস্য।
Post a Comment