গুপ্ত রহস্যের ইস্টার আইল্যান্ড ! কেন তৈরি হয়েছিলো দানবীয় পাথুরে মূর্তিগুলো ?


৬৪ বর্গ মাইল আয়তনের, দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের লাভা নির্মিত, বৃক্ষশূন্য আগ্নেয় দ্বীপ ইস্টার আইল্যান্ডত্রিভুজাকৃতির দ্বীপটির অবস্থান দক্ষিণ আমেরিকার চিলি উপকূলের ২,৩০০ মাইল পশ্চিমে। প্রশান্ত মহাসাগরের নির্জন এই দ্বীপে রহস্যের মতো ছড়িয়ে আছে অসংখ্য দানব আকৃতির মূর্তি। কিন্তু কেন তৈরি হয়েছিলো দানবীয় পাথুরে মূর্তিগুলো ?



গুপ্ত রহস্যের ইস্টার আইল্যান্ড ! কেন তৈরি হয়েছিলো দানবীয় পাথুরে মূর্তিগুলো ?


১৭২২ সালে অ্যাডমিরাল জ্যাকব রগেউইন একদিন রহস্যে ঘেরা একটি দ্বীপ আবিস্কার করেন, দিনটি ছিল ইস্টার সানডে। সাথে সাথে দ্বীপটির নামকরণ হয়ে গেলো ইস্টার আইল্যান্ডওলন্দাজ এই দলের ক্যাপ্টেন এডমিরাল সিদ্ধান্ত নিলেন এই দ্বীপে নোঙর ফেলবেন। দ্বীপের মানুষজন খুঁজে বের করলেন, কথা বললেন তাদের সাথে। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো, দ্বীপের অধিবাসীরা কেউই এই মূর্তিগুলোর ব্যাপারে কিছু জানাতে পারল না। তারা এটাও জানালো, তারা মূর্তিগুলোকে দেবতা মনে করে নিয়মিত পূজা দেয়। ধীরে ধীরে পুরো পৃথিবী জানলো ইস্টার আইল্যান্ডের কথা। শুরু হলো নানান গবেষণা। রহস্য উন্মোচনের জন্য নেমে পড়লেন অনেকে।

শেষ পর্যন্ত নরওয়ের বিশ্ববিখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ থর হেয়ারডাল দীর্ঘদিনের গবেষণার পর জানালেন, ৩৮০ খ্রিস্টাব্দে পেরু থেকে কিছু মানুষ এসে এই দ্বীপে বসবাস শুরু করে। সে সময় তারা তৈরি করেছিল রাস্তাঘাট, মন্দির, সুড়ঙ্গ পথ। ১২৮০ খ্রিস্টাব্দে পেরু থেকে আরও লোকজন এসে দখল বসায় দ্বীপটিতে। ধারণা করা হয়, তারাই গড়ে এসব মূর্তি। 

এর প্রায় চারশত বছর পর, ১৬৮০ সালে পলিনেশীয়রা এশিয়ার দিক থেকে এসে দ্বীপটি অধিকার করে এবং সে সময় মূর্তি তৈরির প্রচলন লোপ পায়। মনে করা হয়, ১২৫০ থেকে ১৫০০ সালের মাঝামাঝি কোনো এক সময়ে এই মূর্তিগুলি তৈরি করেছে রাপা নুই গোষ্ঠীর লোকেরা।

মূর্তি বানানোর জন্য এই পাথরগুলো বৃক্ষকাণ্ডের তৈরি এক ধরনের বিশেষ গাড়ি দিয়ে আনা হতো। অনুমান করা হয়, তখন সেই দ্বীপের জনসংখ্যা ছিল প্রায় দুহাজার। এখানে লক্ষ্যণীয়, কতগুলো মূর্তির চোখ আবার সম্পূর্ণ তৈরি ছিল না। এজন্য সেগুলোকে বলা হয় অন্ধমূর্তি। ইস্টার আইল্যান্ডের জনগোষ্ঠীর পরিণতি অনেকটা নাজকার অধিবাসীদের মতোই। 

গত কয়েক দশকে নৃবিজ্ঞানী জেয়ার্ড ডায়মন্ড এবং অন্যান্যরা ইস্টার আইল্যান্ডকে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে মনে করেন। তারা বলেছেন, বনভূমি অতিরিক্ত উজাড় করার প্রভাব পড়েছিল ইস্টার আইল্যান্ডের জনগোষ্ঠীর ওপর। এছাড়াও আহুনামে পরিচিত পাহাড়ের বিশাল প্ল্যাটফর্ম পাওয়া যায় এই দ্বীপে। আছে গুহা চিত্রসহ নানান কিছু। প্রায় আটশটি দানবাকৃতির মূর্তি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পুরো দ্বীপ জুড়ে। 



থর হেয়ারডেল সর্বপ্রথম গবেষণার জন্য ১৯৫৫-১৯৫৬ সালে অভিযান শুরু করেন। ১৯৬২ সালে তিনি স্টকহোমে সুইডিশ এনথ্রোপোলজি এন্ড জিওলজি সোসাইটিতে সিরিজ লেকচার দেন। এই সিরিজ লেকচার তার নিজেরই লেখা সি রুটস টু পলিনেশিয়াতে প্রকাশিত হয়।

0/Post a Comment/Comments

Previous Post Next Post