প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন শুধু যে আমাদের অতীত তুলে ধরে
তা নয়, কোনো কোনো আবিষ্কার জন্ম দেয় অসংখ্য প্রশ্নেরও। আর অনুদঘাটিত অনেক রহস্যের
মতো এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আমাদের এখনো ভাবায়,
কৌতুহলী করে পেছনের সত্য উন্মোচনের জন্য। রহস্য এবং অজানা সত্যের সন্ধানে আমরা এই
প্রতিবেদনে হাজির করেছি এমন ৫টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন যার ব্যাখ্যা নেই কারো
কাছে।
সবচেয়ে রহস্যময় ৫টি প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার যার ব্যাখ্যা নেই কারো কাছে !!
ডরসেটের মুণ্ডুবিহীন ভাইকিং
ডরসেটের মুণ্ডুবিহীন ভাইকিং। Photo: Oxford Archaeology |
২০০৯ সালে
ইংল্যান্ডের ডোরসেটে একটি জায়গায় খনন করার সময় প্রত্নতত্ত্ববিদরা বিষ্মিত হয়ে পড়লেন।
তারা একটি গণকবর আবিষ্কার করলেন যেখানে ৫০ জনেরও বেশি মানুষের মরদেহ
গাদাগাদি করে মাটিচাপা দেয়া হয়েছিলো। অদ্ভুতভাবে এদের সবারই ধর
থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিলো। আর ওই মাথাগুলোও পাশেই একটি জায়গায় মাটি চাপা
দেয়া অবস্থায় পাওয়া যায়। গবেষকদের অনুমান এই হতভাগ্য মানুষগুলো ছিলো
স্ক্যান্ডেনেভিয়ান ভাইকিং। কিন্তু কি কারণে এতজনকে একসাথে হত্যা করা হয়েছিলো তা
নিয়ে অনেক ধরনের কাহিনী প্রচলিত আছে কিন্তু সত্যিকারে কি
ঘটেছিলো এদের ভাগ্যে তা এখনো জানা যায়নি।
আগুনে মমি
ইবালোই উপজাতির মানুষরা মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য এই অদ্ভুত মমি করার পদ্ধতি ব্যবহার করতো। Photo: Tadolo/ Flickr |
ফিলিপাইনের
উত্তরাঞ্চলে বেশ কয়েকটি গুহা আবিষ্কার করা হয়। পরবর্তীতে জানা যায় এগুলো ছিলো
ইবালোই নামে এক আদিবাসীদের মৃতদেহ সমাহিত করার স্থান। গুহার ভেতরে
ছিলো অসংখ্য মানুষের খুলি ও ছোটো ছোটো বেশ কিছু কফিন। অনেকদিন ধরেই ইবালোই উপজাতির
মানুষরা মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য এই অদ্ভুত মমি করার পদ্ধতি ব্যবহার করেছে।
মৃতপ্রায় মানুষকে প্রচুর লবনমেশানো পানীয় পান করানো হতো যাতে ভেতর থেকে শরীর
পানিশূন্য হয়ে পড়ে। মারা যাওয়ার পর মৃতদেহটিতে নানা ধরনের ভেষজ দিয়ে বসানোর
ভঙ্গিতে আগুনের ওপর রেখে দেয়া হতো কয়েক সপ্তাহ ধরে। মৃতদেহ শুকিয়ে গেলে তা কফিনে
ভরে গুহার ভেতরে রেখে দেয়া হতো। ১৫শ’ শতকে ফিলিপাইনে স্প্যানিশ উপনিবেশ
স্থাপিত হওয়ার পর এই প্রথাটি ধীরে দীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
মৃত্যুবাঁশি
মূলত ধর্মীয় উদ্দেশ্যেই ব্যবহার হতো এই বাঁশিগুলো। Photo: Public Domain |
১৯৯৪ সালে
মেক্সিকো সিটিতে প্রাচীন এজটেক সভ্যতার একটি মন্দিরে খনন
চালিয়ে প্রত্নতত্ত্ববিদরা অদ্ভুত কিছু বাঁশি
আবিষ্কার করলেন।
শুরতে ধরে নেয়া হয়েছিলো এগুলো খেলনা বাঁশি। কিন্তু পরে এই বাঁশিগুলো
তৈরির পেছনের কারণ জানতে পারলেন গবেষকরা। মূলত ধর্মীয় উদ্দেশ্যেই ব্যবহার হতো এই
বাঁশিগুলো। বাঁশিতে ফু দিলে যে শব্দ
তৈরি হতো তাতে মনে হতো শতশত মানুষ চিৎকার করছে। মনে করা হয় দেবতার উদ্দেশ্যে মানুষ বলি দেয়ার সময় বাজানো হতো এই বাঁশিগুলো।
কিন্তু শুধুমাত্র এই উদ্দেশ্যে এত বাঁশি তৈরি করা
হয়েছিলো তা মানতে নারাজ অনেক গবেষকই।
এথেন্সের সমাধী
৬৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে একটি ব্যর্থ অভ্যুত্থানের ঘটনায় এদের হত্যা করা হয়েছিলো। Photo: www.nationalpost.com |
২০১৬ সালে
গ্রীসের এথেন্সে মাটি খোঁড়ার সময় প্রাচীন গ্রীক সভ্যতার
একটি সমাধীক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়। দেড় হাজারেরও বেশি কঙ্কাল খুঁজে
পাওয়া যায় সেখানে। শেকল দিয়ে হাত বাঁধা বেশ কিছু কঙ্কাল
পাওয়া যায় একটি কক্ষে। অনেকগুলো ছিলো একটির ওপর আরেকটি গাদাগাদি করে রাখা। ৬৩২
খ্রিস্টপূর্বাব্দে একটি ব্যর্থ অভ্যুত্থানের ঘটনায় অভিযুক্তদের শেকল দিয়ে বেঁধে ওই কক্ষে ফেলে রাখা হয়েছিলো। পরে ক্ষুধা তৃষ্ণায় তাদের মৃত্যু
হয়েছিলো বলে ধারণা প্রত্নতত্ত্ববিদদের। কিন্তু, ঠিক কি ঘটেছিলো এতোগুলো মানুষের ভাগ্যে তা আজো
রহস্য হয়ে রয়েছে।
চিৎকাররত মমি
চিৎকাররত মমি। Photo: Public Domain |
১৮৮৬ সালে
মিশরের ভ্যালি অব কিংসে খুঁজে পাওয়া ফারওদের মমির তালিকা
করার সময় একটি সাদামাটা কফিন সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সাধারণত ফারাওদের কফিনগুলো
সাজানো হতে চমৎকারভাবে। কিন্তু ওই কফিনটি ছিলো সবার থেকে ব্যতিক্রম। কফিনটি
খুলে একটি মমিকৃত দেহ পাওয়া যায়, যার শরীর ছিলো ভেড়ার
চামড়া দিয়ে মোড়া। দেহটির হাত পা বাঁধা অবস্থায় ছিলো আর
মুখটি ছিলো চিৎকার করার ভঙ্গিতে খোলা। মমিটি কার সে বিষয়ে কোনো ধারণাই
করতে পারলেন না গবেষকরা। মানুষটিকে বিষপ্রয়োগে বা জ্যান্ত কফিনে ভরে হত্যা করা
হয়েছিলো বলে মনে করেন অনেক গবেষক। কিন্তু ওই মমি কার বা কেনই বা
প্রথাগত নিয়মের বাইরে তার মরদেহ মমি করা হয়েছিলো এ রহস্য ভেদ হয়নি আজো।
বাংলায় দুর্দান্ত সব ভিডিও দেখতে আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন- Funny Frog Creatives
Photo Credit:
1. ডরসেটের মুণ্ডুবিহীন ভাইকিং। Photo: Oxford Archaeology
2. আগুনে মমি। Photo: Tadolo/ Flickr
2. আগুনে মমি। Photo: Tadolo/ Flickr
3. এথেন্সের সমাধী। www.nationalpost.com
Post a Comment