ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হাজারো মন্দির।
এদের কোনটি আয়তনে, কোনটি নির্মাণশৈলির জন্য বিখ্যাত আবার কোনটির ইতিহাসের সাথে
জড়িয়ে রয়েছে প্রখ্যাত সব মুনিঋষির নাম। এছাড়া কোনো কোনো মন্দির যেমন প্রাচীন তেমনি
এদের কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ব্যাখ্যাতীত সব রহস্য। ভারতের সবচেয়ে রহস্যময় মন্দির
নিয়ে থাকছে এই প্রতিবেদন।
ভারতের সবচেয়ে রহস্যময় ৫টি মন্দির
কোনারকের সূর্য মন্দির
ভারতের কোনারকে ১২৫৫ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দিরটি নির্মাণ করা
হয়। মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছিলো একটি ঘোড়ায় টানা গাড়ির আদলে যেখানে ৭টি ঘোড়া ২৪
চাকাওয়ালা একটি গাড়ি টেনে নিয়ে যাচ্ছে বলে তুলে ধরা হয়েছে। ১৭ শতকে মন্দিরটির একটি
অংশ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিলো। বিশ্বাস করা হয়, ওই ধসে পড়া অংশের চূড়ায় একটি ৫২ টন
ওজনের চুম্বক রাখা ছিলো যা ওই মন্দিরের প্রধান মূর্তি বা প্রতিকৃতিকে শূন্যে
ভাসিয়ে রাখার কাজে ব্যবহার করা হতো। অসাধারণ কারুকার্যময় চাকাগুলো প্রকৃতপক্ষে
সূর্য ঘড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হতো যা এখনো প্রায় নিঁখুত সময় দিতে পারে।
বৃহদেশ্বরের মন্দির
ভারতের অন্যতম বড় বৃহদেশ্বরের মন্দিরটি তানজোরে ১০১০
খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করা হয়েছিলো। ২১৬ ফুট উঁচু এই মন্দিরটি নির্মাণে আনুমানিক ১
লাখ ৩০ হাজার টন পাথর ব্যবহার করা হয়েছিলো। মন্দিরটির চূড়ায় অবস্থিত ৮০ টন ওজনের
গোলাকার কুম্বমটি একটি মাত্র গ্রানাইট পাথর কেটে তৈরি করা হয়েছিলো। কিন্তু হাজার
বছর আগে মন্দিরটি নির্মাণ করার সময় এত ওজনের এই পাথর খন্ডটি কিভাবে অত উঁচুতে তোলা
হয়েছিলো তা নিয়ে রহস্য রয়ে গেছে আজও।
বীরভদ্র মন্দির
ভারতের লেপাক্ষিতে ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দিরটি নির্মাণ
করা হয়েছিলো। মন্দিরের ছাদ ধরে রাখার জন্য এখানে ৭০টি পিলার ব্যবহার করা হয়েছে।
কিন্তু এর মধ্যে একটি পিলার ছাদকে ধরে না রাখার পরিবর্তে বলতে গেলে নিজেই ঝুলে আছে
ছাদ থেকে। অর্থাত পিলারটি মেঝে থেকে খানিকটা ওপরে ভেসে রয়েছে। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে
এক বৃটিশ প্রকৌশলী এই ঝুলন্ত পিলারের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালান। অনেকে চেষ্টার
পর ওই পিলারের এক প্রান্ত মেঝের সাথে স্পর্শ করাতে সক্ষম হন তিনি। কিন্তু এর ফলে
সিলিং এবং ফ্রেস্কো চিত্রকর্মগুলোর ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে পড়ে। কিন্তু কি কারণে এবং
কিভাবে ওই পিলারটি ছাদ থেকে ঝুলে আছে তা আজো রহস্য হয়ে রয়েছে। এর সাথে পাথরের ওপর
৩ ফুট লম্বা একটি পায়ের ছাপ আরো রহস্যময় করে তুলেছে এই মন্টিরটিকে।
পদ্মনাভস্বামী মন্দির
ভারতের থিরুভানানথাপুরামে অবস্থিত এই মন্দিরটি কবে নির্মাণ
করা হয়েছিলো তা আজো জানা যায়নি। মনে করা হয় এটিই বিশ্বের সবচেয়ে ঐশ্বর্যশালী মন্দির।
মন্দিরের মাটির নিচের ভল্টে ২২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের স্বর্ণ এবং নানা মূল্যবান
সামগ্রী রক্ষিত রয়েছে বলে মনে করা হয়। মন্দিরটির মাটির নিচে এমন ৮টি ভল্ট রয়েছে
যার মাত্র ৫টি এখন পর্যন্ত খুলে দেখা হয়েছে। এই ভল্টগুলোর মধ্যে একটি সবচেয়ে
রহস্যময় এবং এখনো পর্যন্ত খুলে দেখা হয়নি ভেতরে কি আছে। এখানকার একটি চেম্বার খুবই
ভারী লোহার দরজা দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। বিশ্বাস করা হয় একটি বিশেষ মন্ত্র
পড়লেই কেবল দরজাটি খোলা সম্ভব। আর অন্য কোনো উপায়ে খোলার চেষ্টা করলে তার পরিণতি
ভালো হবে না বলেও বিশ্বাস মানুষের।
কৈলাস মন্দির
এই মন্দিরটিও কবে নির্মাণ করা হয়েছিলো তার সঠিক ইতিহাস জানা
যায় না। তবে মন্দিরের দেয়ালে বিভিন্ন লেখা এবং নকশা থেকে অনুমান করা হয় ৮ম শতকে এই
লেখা বা নকশাগুলো তৈরি করা হয়েছিলো। ভারতের ইলোরায় গুহার ভেতরে নির্মাণ করা
হয়েছিলো এই মন্দিরটি। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছিলো
একটি নিরেট পাথরখন্ড কেটে। মূলত পাথুরে পাহাড়ের গা লম্বালম্বিভাবে কাটতে কাটতে রুপ
দেয়া হয়েছে এই মন্দিরটি। অর্থাত ওপর থেকে পাথর কাটতে কাটতে নিচের দিকে নামতে
হয়েছে, সেইসাথে রুপ দিতে হয়েছে এই সব অসাধারণ কাঠামো, প্রতিকৃতি এবং ঐতিহাসিক নানা
বিষয়। আর ৪ লাখ টন পাথর কেটে সরিয়ে ফেলতে হয়েছে এখান থেকে। যে কারণে অনেকে মনে
করেন এই মন্দিরটি আদপেই মানুষের হাতে তৈরি হয়নি।
Post a Comment