গুপ্তধনের
প্রতি মানুষের কৌতুহল, আকর্ষণ এবং লোভ যেটাই বলুন, হাজার হাজার বছর ধরেই তা রয়েছে
মানুষের মধ্যে। হঠাত কোনো গুপ্তধন পেয়ে বিত্তবান হয়ে যাওয়ার স্বপ্ন মানুষকে টেনে
নিয়ে গেছে এমন এমন সব অভিযানে যেখানে ছিলো দুর্ঘটনা এবং মৃত্যুর ভয় কিংবা না
পাওয়ার চরম হতাশা। এই প্রতিবেদনে জানবেন এমন ৫টি
বহুমূল্য গুপ্তধনের কথা যার সন্ধান এখনো পায়নি মানুষ।
৫টি বহুমূল্য গুপ্তধন যার সন্ধান এখনো পায়নি মানুষ !
সান মিগুয়েলের ঐশ্বর্য
১৭১৫
সালের দিকে ১১টি জাহাজ নিয়ে কিউবা থেকে দেশে ফিরছিলো স্প্যানিয়ার্ডরা। প্রতিটি
জাহাজই ছিলো ধনসম্পদে ভরা। এগুলোর মধ্যে সোনা-রুপা ছাড়াও ছিলো মূল্যবান পাথর ও
অলংকার। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে জলদস্যুদের এড়ানোর জন্য হারিকেনের মৌসুম শুরুর আগে আগে রওনা হয়েছিলো স্প্যানিশ
অভিযাত্রীরা। কিন্তু যাত্রা শুরুর মাত্র ৭ দিনের মাথায় প্রচণ্ড হারিকেনের তান্ডবে ফ্লোরিডা উপকূলের কাছাকাছি
ডুবে যায় সবগুলো জাহাজই। মারা যায় এক হাজারের বেশি মানুষ। আর সাগরে হারিয়ে যায় সব
সম্পদ।
এর পরের চার বছরে সামান্য কিছু সম্পদ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিলো। পরবর্তীতে
কিপ ওয়াগনার নামে এক গুপ্তধন শিকারী ডুবে যাওয়া ৭টি জাহাজ খুঁজে বের করেন। কিন্তু হারানো সম্পদের খুব সামান্যই উদ্ধার করতে সক্ষম হন তিনি। মনে করা হয়, সান মিগুয়েল
নামে এক জাহাজে করেই নেয়া হচ্ছিলো বেশিরভাগ সাম্পদ। কিন্তু সে জাহাজ এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।
টপলিটজ লেকের নাজি স্বর্ণ
দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে জার্মানির পরাজয় যখন প্রায় নিশ্চিত তখন অস্ট্রিয়ার টপলিটজ লেকের পানিতে মিলয়ন মিলয়ন ডলার মূল্যের
স্বর্ণ এবং মূল্যবান সমাগ্রী ডুবিয়ে দিয়েছিলো বলে জানা যায়। রাশিয়া থেকে লুট করে
আনা অ্যাম্বার রুমটিও নাকি আছে এই সম্পদের তালিকায়। আর এ সম্পদ উদ্ধারে বছরের পর
বছর ধরে চলেছে অভিযান।
কিন্তু বেশিরভাগ অভিযানই ব্যর্থ হয়েছে মূলত এই লেকের তলায়
ছড়িয়ে থাকা অগুনতি কাঠের গুড়ির কারণে। গুড়ির ফাঁকে আটকে গিয়ে প্রাণও গেছে অনেক ডুবুরীর। আর সব বাঁধা ডিঙ্গিয়ে যারা লেকের তলায় পৌঁছাতে পেরেছিলো তারা শুনিয়েছে যে, আস্ত একটা
বিমানও নাকি শুয়ে আছে লেকের তলায়। কিন্তু ২০০৯ সালে অস্ট্রিয়ার পরিবেশবাদিরা ওই
লেকে নামা ১০০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু এখনো হয়তো অনেকে খুঁজে ফিরছে ওই লুকোনো ঐশ্বর্য।
ওক দ্বীপের টাকার গর্ত
কানাডার
নোভা স্কটিয়ার কাছেই ওক দ্বীপ। প্রাকৃতিক দৃশ্যের চেয়ে বহুমূল্য গুপ্তধনের
আকাঙ্খাই শত শত বছর ধরে মানুষকে টেনে এনেছে এই দ্বীপে। কাহিনীর শুরু ১৭৯৫ সালে।
জনশ্রুতি অনুযায়ী এক রাতে ওক দ্বীপে অদ্ভুত আলো দেখতে পেয়ে পরের দিন দেখতে যায়
ম্যাকগিনিস নামে এক কিশোর। দ্বীপে একটি ছোটো গর্ত খুঁজে পায় সে। জলদস্যুরা কোনো সম্পদ লুকিয়ে রেখেছে কিনা তা
জনার জন্য ওই গর্তটি খুড়তে শুরু করে সে। পরবর্তীতে বেশ অনেকদিন ধরে ম্যাকগিনিস ও
তার বন্ধুরা ওই গর্ত খোড়ে। গর্তের ভিতর কিছু কাঠের তৈরি মাচা দেখতে পায় তারা যাতে নিঃসন্দেহ হওয়া যায় ওই গর্তটি ছিলো
মানুষের তৈরি। কিন্তু ওই কিশোররা কোনো গুপ্তধন খুঁজে পায়নি। ওখানে যে গুপ্তধন আছে এ নিয়ে কিন্তু গুজব ঠিকই
রটে যায়।
এরপর
বিভিন্ন সময় অনেকেই চেষ্টা করেছে। গর্তটি ৯০ ফুট পর্যন্ত খোড়া হলে সেখানে একটি অদ্ভুত পাথর পাওয়া যাতে অনেক সাঙ্কেতিক চিহ্ন ছিলো। যদিও ওই সংকেতের অর্থ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এই
পাথর পাওয়ার পর মানুষের মধ্যে গুপ্তধনের বিশ্বাস আরো প্রবল হয়ে উঠে। পরে, অনেক
কোম্পানি লাখ লাখ টাকা খরচ করেছে এই গুপ্তধন উদ্ধারের পেছনে। মূল গর্তের আশপাশেও
এত গর্ত খোড়া হয়েছে যে বলতে
গেলে হারিয়ে গেছে আসল গর্তটাই। আর গর্তে এখনো কোনো গুপ্তধন মেলেনি তবে প্রাণ
গিয়েছে ছয় জন মানুষের।
ওক
দ্বীপের গুপ্তধনের গুজব এতটাই বিশ্বাস্য ছিলো যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট
ফ্র্যাঙ্কলিন রুজভেল্টও তার তরুন বয়সে ওক দ্বীপে খোড়াখুড়ি করেছিলেন। এখনো অনেকেই খুঁজে বেড়ায় ওই গুপ্তধন।
রকি পর্বতের গুপ্তধন
১৯৮৮
সালে ক্যান্সার ধরা পড়ার পর মিলিয়নিয়ার আর্ট কালেক্টর ও বৈমানিক ফরেস্ট ফেন তার
মূল্যবান সংগ্রহের একটা বড় অংশ রকি পর্বতের কোথাও লুকিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। এর
মধ্যে দুটি বই লেখেন তিনি যেখানে গুপ্তধন পাওয়ার সুত্র দিয়ে ২০১০ সালে সত্যিই রকি পর্বতের
কোনো এক জায়গায় লুকিয়ে ফেলেন মিলিয়ন ডলারের গুপ্তধন।
ফেনের এক
বন্ধু জানান, বহুমূল্য গুপ্তধনের মধ্যে স্বর্নের কয়েন, বহু স্বর্ণালঙ্কার,
মূল্যবান পাথর ইত্যাদি রয়েছে। তবে, এখন পর্যন্ত ওই গুপ্তধন কেউ খুঁজে পায়নি। মূলত বইয়ের একটি কবিতায় দেয়া হয়েছে
৯টি সূত্র যার অর্থ বের করতে পারলেই পাওয়া যাবে গুপ্তধন। কবিতা পড়ে অনেকেই চেষ্টা
করেছে সুত্র বের করতে। অনেকে সেন্ট্রাল পার্কের বিভিন্ন স্থানে খুড়াখুড়ি করেছে
বিস্তর। আবার অতি উতসাহী কেউ কেউ ফেনের বাবা এবং ভাইয়ের কবর পর্যন্ত খুড়ে দেখেছে।
চাইলে বই দুটি সংগ্রহ করে আপনিও নেমে পড়তে পাড়েন গুপ্তধন উদ্ধার করার অভিযানে।
নুয়েস্ত্রা সেনোরা ডি অ্যাটোচা
১৬২২
সালে স্প্যানিশ গ্যালিয়ন নুয়েস্ত্রা সেনোরা ডি অ্যাটোচা ততকালীন নিউ গ্রানাডা, বর্তমানের হাভানা বন্দর থেকে স্পেনের উদ্দেশে
যাত্রা শুরু করে। আরো বেশ কয়েকটি জাহাজ যোগ দেয় এ যাত্রায়। আর প্রতিটি জাহাজের
কার্গোই বোঝাই ছিলো সোনা-রুপা, বহুমূল্য পাথর ও অলঙ্কার দিয়ে। যাত্রার দুই দিনের মাথায় সেপ্টেম্বরের ৬ তারিখে একটি প্রচন্ড হারিকেনের কবলে পড়ে
ফ্লোরিডার দক্ষিণ উপকূলের কাছে ডুবে যায় অ্যাটোচাসহ আরো বেশ কয়েকটি জাহাজটি।
১৯৮০
সালে গুপ্তধন শিকারী মেল ফিশার ফ্লোরিডা উপকূলের মাত্র ১৬০ কিলোমিটার দূরে খুঁজে পান ওই স্প্যানিশ জাহাজগুলোর একটি। ১৯৮৫ সালে অ্যাটোচা জাহাজরেই সন্ধান পান তিনি এবং ৫শ’ মিলিয়ন ডলারের সম্পদও উদ্ধার করা সম্ভব হয়। কিন্তু গবেষকদের মতে ওই বহরের সবগুলো জাহাজ খুঁজে পেলে আরো বিপুল পরিমাণ সম্পদ পাওয়া যাবে।
Post a Comment