একটা সময় ছিলো যখন বাঙালির ঘরে ঘরে শিশুদের ঘুম পাড়ানোর জন্য চাঁদ মামার দারস্থ
হতেন মায়েরা। আর কত ছড়া-কবিতা গান বা গল্প লেখা হয়েছে চাঁদ নিয়ে তার হিসেবই নেই। আমরা বুঝতে পারি বা না
পারি, আমাদের জীবনে চাঁদের গুরুত্ব যে কত তা বলে শেষ করা যাবে না। চাঁদ বিস্ফোরিত
হয়ে গেলে কি ঘটবে তা জানতে পড়ুন এই বিশেষ প্রতিবেদন।
চাঁদ বিস্ফোরিত হয়ে গেলে কি ঘটবে ?
তার আগে চাঁদের জন্মের ইতিহাসটা খানিকটা বুঝে নেয়া যাক।
অনেক অনেক বছর আগে যখন আমাদের এই পৃথিবী কেবল তৈরি হয়েছে,
তখন সূর্যকে ঘিরে একাই ঘুরত গ্রহটি। অর্থাৎ তখন কোনো উপগ্রহ ছিলোনা নিঃসঙ্গ এই গ্রহের।
এর বেশ কিছুদিন পর মহাকাশ থেকে ধেয়ে এলো মঙ্গল গ্রহের সমান অজানা একটি বস্তু আর অনিবার্যভাবেই
যেন পতিত হলো নব্য পৃথিবীর বুকে। আর তাতেই পৃথিবীর একটি বড় অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে
পড়লো। আর এর থেকই জন্ম নেয় আমাদের একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ।
বিজ্ঞানীদের মতে, এই সংঘর্ষের পরই কেবলমাত্র আমাদের এই
পৃথিবী প্রাণের উৎপত্তি এবং বসবাসের উপযুক্ত হয়ে উঠেছিলো। যে কারণে অনেকেই দাবি
করেন চাঁদই
আমাদের গ্রহে প্রাণ সঞ্চার করেছিলো।
প্রাণের জীবন ধারনের জন্য চাঁদের ভূমিকা যে কত তা একটি
ছোট্ট উদাহরণেই বোঝা যেতে পারে। বলতে গেলে আমাদের এই সাগর-মহাসাগর বেশিরভাগটাই
নিয়ন্ত্রণ করছে চাঁদ। কিভাবে?
চাঁদের মধ্যাকর্ষণ শক্তি সমুদ্রের পানিকে নিজের দিকে টানে।
এর ফলে চাঁদের দিকে এবং এর বিপরীত দিকের পানি একই সময়ে ফুলে উঠে। চাঁদ যখন দূরে
সরে যায় তখন স্বাভাবিকভাবেই পানি নেমে যায়। এই প্রক্রিয়াকে আমরা জোয়ার-ভাঁটা
হিসেবে জানি। যদিও সূর্যও সমুদ্রপৃষ্ঠকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে কিন্তু তা পৃথিবী
থেকে অনেক অনেক দূরে হওয়ায় চাঁদের মতো প্রবল আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়না।
যে কারণে, যদি কোনো কারণে চাঁদ আকাশ থেকে উধাও হয়ে যায় তবে
পৃথিবীর সুমদ্রপৃষ্ঠের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে সূর্যের হাতে। আর এর ফলে হবে
মারাত্মক।
সমুদ্রের পানি চাদের টানে পৃথিবীর দুই প্রান্তে ফুলে থাকে অনেকটা গম্বুজের মতো। যে কারণে চাঁদ উধাও হয়ে গেলে ওই ফুলে উঠা পানি দ্রুত নেমে আসতে থাকবে। এর ফলে ভয়ংকর সুপার সুনামির সৃষ্টি হবে যা ভাসিয়ে নিয়ে যাবে সবকিছু। আর নয়তো ২৫০ ফুটের বেশি উঁচু দুটি প্রকাণ্ড ঢেউয়ের দেয়াল পরস্পরের দিকে ধেয়ে যাবে প্রচন্ড শক্তি নিয়ে। এর ফলে পৃথিবীর কোনো উপকূলই আর অক্ষত থাকবে না।
মোট কথা আমাদের এই আধুনিক সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাবে নিমিষেই।
সুনামি হয়তো একসময় শান্ত হবে কিন্তু এই পৃথিবী আর আগের মতো থাকবে না। আবহাওয়া বা
জলবায়ুর পরিবর্তণ হবে নাটকীয়। আমাদের পরিচিত পৃথিবী আর কখনোই দেখতে পাওয়া যাবে না।
দুঃস্বপ্ন কিন্তু এখানেই শেষ নয়। চাঁদের কারণে এই পৃথিবী
একটি ভারসাম্য বজায় রেখে সূর্যের চারদিকে ঘুরছে। যদি কোনো কারণে চাঁদ গায়েব হয়ে
যায় তবে এই ভারসাম্য আর থাকবে না। ছেড়ে দেয়া পাগলা ঘোড়ার মতো পৃথিবী ঝাঁকি খেতে
থাকবে উদ্দেশ্যহীনভাবে। এর ফলে বিনষ্ট হবে প্রাকৃতিক শৃঙ্খলা। স্বাভাবিক ঋতুচক্র
ধ্বংস হয়ে যাবে, শীত-গ্রীষ্ম বলে কিছুই
থাকবে না। পৃথিবীর তাপমাত্রা ওঠানামা করতে থাকবে নাটকীয়ভাবে। যেমন দুপুরে
তাপমাত্রা পৌঁছে যাবে ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি, আর ভোরবেলায় তা নেমে যাবে
হীমাঙ্কের নিচে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আর এর পরিণতি যে কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে তা নিশ্চয়ই
অনুমান করতে পারছেন। সহজ ভাষায়
মানবজাতির অস্তিত্ব রীতিমতো হুমকির মুখে পড়ে যাবে। গবেষকদের মতে, এরকম পরিস্থিতি
তৈরি হলে অপেক্ষাকৃত দুর্বলরা সবার আগে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। আর যারা শক্তিশালী
তারা হয়তো ধীরে ধীরে এই চরম প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেই নিজেদের রক্ষা করতে সমর্থ
হবে।
কিন্তু সেই পৃথিবীটা হবে মানুষের জন্য অচেনা একটি পৃথিবী, সম্পূর্ণ
নতুন একটা অধ্যায়।
এছাড়াও, পৃথিবীতে
প্রাণের একটা বড় অংশ বাস করে সমুদ্রে। আর পরোক্ষভাবে এদের জীবন নির্ভর করে চাঁদের
ওপর। সুমুদ্রের খাদ্য-শৃঙ্খল নির্ভর করে জোয়ার-ভাঁটার ওপর। যে কারণে চাঁদ না
থাকলে, সমুদ্রের অধিকাংশ প্রাণীই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আর এর প্রভাব পড়বে সমগ্র মানব
জাতির ওপর।
কিন্তু কিভাবে পৃথিবীর একমাত্র ওই উপগ্রহটি নিশ্চিহ্ন হয়ে
যেতে পারে। এর একমাত্র গ্রহণযোগ্য উপায় হতে পারে- বিস্ফোরণ।
একটি প্রচণ্ড বিস্ফোরণের পরে গোটা চাঁদটাই মহাজাগতিক
ধুলোতে পরিণত হতে পারে। এর এটা ঘটলে আমাদের এই পৃথিবীও আর এমন থাকবে না। সম্পূর্ণ
অপিরিচত এবং নতুন একটি গ্রহে পরিণত হবে তা।
আর যদি চাঁদ বিস্ফোরিত হয়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায় তবে ওই
টুকরোগুলো একসময় পৃথিবীর মাটিতে এসেই আছড়ে পড়বে। আর তার পরিণতিও কিন্তু কম ভয়ংকর
হবে না।
Post a Comment