রাস্তায় ব্যবহৃত নতুন যেসব প্রযুক্তি আপনার চোখ ধাঁধিয়ে দিবে


নতুন প্রজন্মের থ্রিডি প্রিন্টেড ব্রিজ বা গাড়ি চলাচল এবং পথচারীদের পারাপার নির্বিঘ্ন করতে স্মার্ট ক্রসিং, জানুন রাস্তায় ব্যবহৃত চোখ ধাঁধানো সব প্রযুক্তির খবর।



রাস্তায় ব্যবহৃত নতুন যেসব প্রযুক্তি আপনার চোখ ধাঁধিয়ে দিবে !!




স্মার্ট ক্রসিং
রাস্তায় গাড়ি চলাচল এবং পথচারীদের পারাপার নির্বিঘ্ন করতে নতুন প্রযুক্তির ক্রসিং সিস্টেম এই স্মার্ট ক্রসিং। ২০১৭ সালের অক্টোবরের ৫ তারিখে লন্ডনের একটি স্টুডিওর রাস্তায় পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয় এই স্মার্ট ক্রসিং। এজন্য রাস্তাটিকেও বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিলো যাকে বলা হয় রেসপন্সিভ সারফেস যাতে রয়েছে বিভিন্ন রংয়ের অসংখ্য এলইডি লাইট। সেন্সর এবং ক্যামেরা ব্যবহার করে রাস্তায় চলাচলকারী গাড়ি, সাইকেল আরোহী বা পথচারী, সবকিছুই আলাদা আলাদা করে সনাক্ত এবং পর্যবেক্ষণ করার ব্যবস্থা রাখা হয়। আর উদ্ভুত যে কোনো পরিস্থিতিতে পথচারী বা গাড়ি চালককে রাস্তার এলইডি লাইট দিয়ে নির্দেশনা দেয়া ছাড়াও স্মার্ট ক্রসিং রাস্তায় চলার নিয়মকানুনও বাতলে দিবে।

ডান্সিং ট্রাফিক লাইট
২০১৪ সালে পর্তুগালের লিসবনে একটি ব্যস্ত রাস্তায় পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছিলো বিশ্ব গণমাধ্যমে। প্রায়ই রেড সিগ্যনাল উপেক্ষা করে রাস্তা পারাপার করেন অনেকেই। কিন্তু যখন রেড সিগ্যনালটিই একটি মানুষের মূর্তি হয়ে নাচতে শুরু করলো তখন দেখা গেল বেশিরভাগ মানুষই ব্যাপারটি উপভোগ করছে এবং সবুজ সংকেত না পাওয়া পর্যন্ত দাড়িয়ে থাকছে। আর পথচারীদের বাড়তি চমক দেয়ার জন্য সিগ্যনালের পাশেই স্থাপন করা হয় একটি বুথ যেখানে ঢুকে যে কেউ ঝালিয়ে নিতে পারবেন নিজের নাচের দক্ষতা। বুথের মোশন সেন্সর সেই নাচকেই ট্রাফিক সিগ্যনালের নাচুনে মূর্তিতে রুপ দিয়ে দিবে।



ইন্টিলিজেন্ট স্পিড বাম্পস
রাস্তায় গতি কমানোর জন্য বসানো প্রচলিত স্পিড ব্রেকারের মূল সমস্যাই হচ্ছে আপনি জোরে যান বা আস্তে, একটা ঝাকুনি কিন্তু আপনাকে হজম করতেই হবে। কিন্তু নতুন প্রযুক্তির এই ইন্টিলিজেন্ট স্পিড বাম্পস সে ঝামেলা থেকে রেহাই দিতে পারে আপনাকে। আর এই বাম্পের ভেতর ভরে দেয়া হয়েছে বিশেষ এক ধরনের তরলের মিশ্রন যা অনেকটা নন নিউটোনিয়ার ফ্লুইডসের মতো কাজ করে। অর্থাত আপনি এই স্পিড বাম্পের ওপর দিয়ে কম গতিতে গাড়ি চালিয়ে গেলে বলতে গেলে কোনো ঝাকুনিই অনুভব করবেন না। তখন এর ভেতরের মিশ্রনটি তরল থাকে। কিন্তু এর ওপর দিয়ে জোরে গাড়ি চালালেই ভেতরের তরলটি কঠিন পদার্থের মতো আচরণ করে এবং স্বভাবতই গাড়ি ঝাকুনি খাবে।

থ্রিডি প্রিন্টেড ব্রিজ
২০১৫ সালে এমএক্স থ্রিডি নামে একটি কোম্পানি একটি উচ্চাভিলাষী প্রজেক্ট হাতে নেয়। ব্রিজ বা সেতু তৈরির কাজে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা নিয়ে কাজ শুরু করে কোম্পানি। আর এ বছরের এপ্রিলে নেদারল্যান্ডের আমস্টারডামে একটি খালের ওপর পদচারী সেতু তৈরির কাজ শুরু করা হয় এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে। একাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট এবং গলিত স্টিল। বিশেষভাবে তৈরি সফটওয়ারে পরিচালিত ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট গলিত স্টিল দিয়ে ৪ মিটার প্রশস্ত এবং ১২ মিটার দীর্ঘ এই সেতুটি তৈরি করেছে। এবং আগামী অক্টোবরেই সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। আর অদূর ভবিষ্যতে আরো জটিল থ্রিডি প্রযুক্তি নিয়ে আসতে যাচ্ছে এমএক্স থ্রিডি।

রাম্বল স্ট্রিপ
সাধারণত রাতের বেলা হাইওয়েতে গাড়ি চালানোর সময় ঘুমিয়ে যাওয়া কিংবা ঝিমুনির কারণে বহু দুর্ঘটনা ঘটে। আর এ ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে নতুন এই প্রযুক্তিটির নাম রাম্বল স্ট্রিপ। এই পদ্ধতিতে রাস্তার ডিভাইডার এবং দুই প্রান্তে বিশেষভাবে খাঁজ কাটা স্ট্রিপ তৈরি করা হয়। আর অসাবধানতাবশত গাড়ির চাকা সেই স্ট্রিপের ওপর পড়লে ঝাকুনিতো বটেই গাড়িও এমন শব্দ করে যা চালকের অন্যমনস্কতা বা ঝিমুনি দূর করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় একটি হাইওয়েতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এবং সেখানে মারাত্মক দুর্ঘটনার সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে।

জিও ওয়েব
রাস্তা নির্মাণ বা রাস্তার স্থায়ীত্ব বাড়াতে নতুন নতুন যেসব প্রযুক্তি এসেছে তাদের মধ্যে জিও ওয়েবের তৈরি জিও সেল অন্যতম। এটি এক ধরনের পলিয়েস্টার বা পলিএথিলিনে তৈরি ত্রিমাত্রিক জালের মতো যা টেনে রাস্তার ওপর বিছিয়ে দেয়া হয় এবং এর ওপর পাথর মাটি এবং অ্যাসফল্টের আস্তর দেয়া হয়। এতে করে এই ত্রিমাত্রিক জাল দারুন শক্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী একটি কাঠামো তৈরি করে। হাইওয়ে বা রেললাইনের কাজে জিও ওয়েবের ব্যবহার নির্মাণ খরচ অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারে। আর জিও ওয়েব ব্যবহার করে অপেক্ষাকৃত নরম মাটি বা আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব জায়গাতেও রাস্তা নির্মাণ সম্ভব। এবং এই প্রযুক্তিতে নির্মিত রাস্তার স্থায়ীত্বও ১০ গুন বেশি হয়।

রোড স্ট্যাবিলাইজিং কন্ট্রাক্টর
রাস্তা রক্ষানাবেক্ষণ বা মেরামতের জন্য নতুন একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করছে স্ট্যাবিলাইজড পেভমেন্টস অব অস্ট্রেলিয়া-এসপিএ নামে একটি কোম্পানি। এটি এক দিকে যেমন খরচ কম, দীর্ঘস্থায়ী অন্যদিকে পরিবেশবান্ধবও। পুরোনো ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার অ্যাসফল্ট ফেলে না দিয়ে সেটিই আবার ব্যবহারের উপযোগী করার পদ্ধতি বের করেছে এসপিএ। এবং এজন্য বিশেষভাবে তৈরি মেশিন রাস্তা থেকে অ্যাসফল্ট তুলে সেখানেই প্রক্রিয়াজাত করে এবং ফের তা রাস্তায় ব্যবহার করা হয়। এতে নির্মাণকাজের খরচ যেমন কমে যায় তেমনি নতুন তৈরি রাস্তাটিও হয় দারুন দীর্ঘস্থায়ী।

রোড রিপেয়ার ড্রোন
২০১৭ সালে রাস্তা মেরামতের জন্য একটি বিশেষ ধরনের ড্রোনের মডেল প্রদর্শিত হয়। সহজে বহনযোগ্য এই ড্রোনটি রাস্তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করে যেসব জায়গা মেরামত করা প্রয়োজন তা নির্ধারণ করতে পারে। স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এটি ছোটোখাটো গর্ত বা ফাটলের জায়গায় নেমে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় অ্যাসফল্ট বা টার বসিয়ে দিতে পারে এবং বিশেষ ধরনের রাসায়নিক প্রলেপ প্রয়োগ করে এর স্থায়ীত্ব বাড়াতেও কাজ করে। এমনকি মাটি বিশ্লষণ করে তা রাস্তা তৈরির জন্য উপযোগী কি না তাও বাতলে দিতে পারবে এই ড্রোন।

ট্যাকটাইল পেভমেন্ট
দৃষ্টিশক্তিহীন বা ক্ষীণদৃষ্টির ব্যক্তিদের জন্য তৈরি করা এটি বিশেষ ধরনের একটি পেভমেন্ট যা সাধারণত ফুটপাত বা স্টেশনে ব্যবহার করা হয়। এর উপরিভাগে গম্বুজাকার, চৌকো বা লম্বা টুকরো পরপর সাজানো থাকে যা রাস্তা বা স্টেশনে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে সাহায্য করে। আর এগুলো এমনভাবে তৈরি করা যাতে পা দিয়ে অনুভব করে বা সাদাছড়ি দিয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা খুব সহজেই এসব নির্দেশনা বুঝতে পারেন। যেমন ব্লিস্টার পেভিং। এখানে সার দেয়া ছোটোছোটো গম্বুজ সমানদুরত্বে বসানো থাকে যাতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা বুঝতে পারনে সামনে রোড ক্রসিং রয়েছে। ১৯৬৫ সালে জাপানে উদ্ভব ঘটেছিলো এই প্রযুক্তির। এরপর থেকে বিভিন্ন দেশেই ব্যবহার করা হচ্ছে ট্যাকটাইল পেভমেন্ট।



Previous Post Next Post