বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ বিমানবন্দর যার আয়তন আপনাকে বিস্মিত করবে !!



বিশ্বায়নের এই যুগে নানা কাজে মানুষকে ঘুরে বেড়াতে বিশ্বের নানা প্রান্তে। এছাড়া অনেকেই ঘুরে ঘুরে দেখতে পছন্দ করেন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। আর দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানোর সবচেয়ে সহজ উপায় বিমানভ্রমণ। তাই ভ্রমণের জন্য বিমানবন্দর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ বিমানবন্দরের কথা।



বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ বিমানবন্দর যার আয়তন আপনাকে বিস্মিত করবে


১০. সল্ট লেক সিটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের এই বিমানবন্দরটি যাত্রী বহনের দিক থেকে শীর্ষ বন্দরগুলোর মধ্যে না থাকলেও আয়তনের দিক দিয়ে তা বিশ্বের ১০ নম্বরে আছে। ২০১৬ সালে বন্দরটি দিয়ে প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ যাত্রী চলাচল করেছে। তবে বিমানবন্দরটির মোট আয়তন ৩ হাজার ১১৬ হেক্টর।  যুক্তরাষ্ট্রের সল্ট লেক সিটি থেকে সাড়ে ৬ কিলোমিটার দূরের বিমানবন্দরটিতে তিনটি পিচঢালা রানওয়ে, একটি কনক্রিটের রানওয়ে ও তিনটি পিচঢালা হেলিপ্যাড রয়েছে। 

. শাল দে গোল বিমানবন্দর, ফ্রান্স

সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট শাল দে গোলের নামে প্যারিসের এই বিমানবন্দরটির নামকরণ করা হয়েছে। এটা ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় ও প্রধান বিমানবন্দর।  ইউরোপের সবচেয়ে বড় বিমান সংস্থাগুলোর অন্যতম এয়ার ফ্রান্সের মূল হাব হিসেবেও বন্দরটি ব্যবহৃত হয়। আয়তনে বিশ্বের ৯ নম্বরে থাকা বিমানবন্দরটি ৩ হাজার ২০০ হেক্টর জায়গাজুড়ে রয়েছে।  বন্দরটিতে তিনটি টার্মিনাল ও চারটি পিচঢালা রানওয়ে রয়েছে। ২০১৬ সালে প্যারিস শাল দে গোল বিমানবন্দরটি ইউরোপের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বন্দর ছিল। ২০১৭ সালে বন্দটি দিয়ে  ৬ কোটি ৬০ লাখ যাত্রী চলাচল করেছেন। আন্তর্জাতিক চলাচলের দিক দিয়ে ২০১৬ সালে বন্দরটি বিশ্বের ৫ নম্বরে ছিল।

. সুবর্ণভূমি বিমানবন্দর, থাইল্যান্ড

সাধারণভাবে ব্যাংকক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামে পরিচিত সুবর্ণভূমি বিমানবন্দর আয়তনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বৃহত্তম। সুর্বণভূমি নামের অর্থ সোনার জমিন বা সোনালী ভূমি। বিমানবন্দরটি এই তালিকায় থাকা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুটি বিমানবন্দরের একটি। ব্যাংকক এয়ারওয়েজ ও জেট এশিয়া এয়ারওয়েজসহ বেশ কয়েকটি এশিয়ান বিমান সংস্থার মূল পোতাশ্রয়। বিশ্বে অষ্টম বৃহত্তম সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরের মোট আয়তন ৩ হাজার ২৪০ হেক্টর। বিমানবন্দরটিতে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু কন্ট্রোল টাওয়ারগুলোর একটিসহ একক ভবনের টার্মিনালের জন্য বিমানবন্দরটি বিখ্যাত। এশিয়ার নবম ব্যস্ততম বিমানবন্দরটি দিয়ে ২০১৬ সালে প্রায় ৫ কোটি ৬০ লাখ যাত্রী চলাচল করেছে।


. কায়রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, মিশর

কায়রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি মিশরের ব্যস্ততম ও আফ্রিকার দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরের আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বন্দরটি যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। প্রাচীন মিশরের হেলিপোলিস শহরে অবস্থিত বন্দরটি মিশরের বৃহত্তম বিমান সংস্থা ইজিপ্ট এয়ার ও নীল এয়ারের মূল পোতাশ্রয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিশ্বের সপ্তম স্থানে থাকা কায়রো বিমানবন্দরের আয়তন ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর। আয়তনে বড় হলেও যাত্রী পরিবহণের দিক দিয়ে বন্দরটি শীর্ষ তালিকায় নেই। পিরামিডের দেশের বিমানবন্দরটিতে তিনটি টার্মিনাল ও তিনটি পিচঢালা রানওয়ে রয়েছে

. সাংহাই পুডোং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চীন

সাংহাই শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের বিমানবন্দরটি শহরটির দুটি বিমানবন্দরের একটি। বন্দরটি বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের পাশাপাশি চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনস ও সাংহাই এয়ারলাইনসের পোতাশ্রয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাংহাই পুডোং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি এশিয়ার পঞ্চম ব্যস্ততম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বন্দরটি দিয়ে ২০১৬ সালে ৬ কোটি ৬০ লাখের মতো যাত্রী চলাচল করেছে। তবে কার্গো পরিবহণে  বন্দরটি বিশ্বের তৃতীয় স্থানে রয়েছে। ২০১৬ সালে বন্দরটি দিয়ে ৩৪ লাখ ৪০ হাজার ২৮০ টনের মতো পণ্য আমদানি-রফতানি করা হয়েছে। ৪ হাজার হেক্টর আয়তনের বিমানবন্দরটিতে দুটি টার্মিনাল ও পাঁচটি কংক্রিটের রানওয়ে রয়েছে।

. কানসাস সিটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যুক্তরাষ্ট্র

কানাসাস সিটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যস্ততম বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে না থাকলেও আয়তনে সবচেয়ে বড়গুলোর একটি। মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের কানসাস শহরে অবস্থিত বিমানবন্দরটিতে অন্যান্য সুবিধার মধ্যে অন্যতম হলো এখানে বিমান মেরামতেরও ব্যবস্থা রয়েছে। ১৯৫০ সালে স্থাপিত বিমানবন্দরটির আয়তন ৪ হাজার ৩২০ হেক্টর। এতে তিনটি টার্মিনাল, দুটি পিচঢালা রানওয়ে ও একটি কংক্রিট রানওয়ে রয়েছে। তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরটি দিয়ে ২০১৬ সালে প্রায় এক কোটি ১০ লাখ যাত্রী চলাচল করেছে।


. ওয়াশিংটন ডুলেস আন্তর্জাতিক  বিমানবন্দর, যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের ৫২তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন ফস্টার ডুলেসের নামে স্থাপিত ওয়াশিংটন ডুলেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি বাল্টিমোর-ওয়াশিংটন এলাকার প্রধান তিন বিমানবন্দরের অন্যতম। আয়তনে  সেরা তিনে  থাকলে যাত্রী পরিবহণের দিক দিয়ে বিমানবন্দরটি পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৬ সালে বন্দরটি দিয়ে ২ কোটি ২০ লাখের মতো যাত্রী চলাচল করেছে। বিশ্বের চতুর্থ স্থানে থাকা বিমানবন্দরটির আয়তন ৫ হাজার ২০০ হেক্টর। বন্দরটিতে প্রধান টার্মিনালের পাশাপাশি দুটি সাব-টার্মিনাল এবং চারটি কংক্রিটের রানওয়ে রয়েছে।

. ডালাস বিমানবন্দর বা ফোর্ট ওর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যুক্তরাষ্ট্র

ডালাস বিমানবন্দরটি যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দর হলেও বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম। যাত্রী পরিবহণের দিক থেকে এটা বিশ্বের ১১তম ব্যস্ততম বিমানবন্দর। ২০১৬ সালে বন্দরটি ৬ কোটি ৫৬ লাখ যাত্রী পরিবহণ করে যা বন্দরটির ইতিহাসেও সবচেয়ে বেশি যাত্রী। ৬ হাজার ৯৬৩ হেক্টর আয়তনের বন্দরটি ম্যানহাটান দ্বীপের চেয়েও বড়। বন্দরটিতে মোট ছয়টি টার্মিনাল রয়েছে। বন্দরটিতে কংক্রিট নির্মিত সাতটি রানওয়ে রয়েছে। বিমানবন্দরটি এতো বড় যে এর নিজস্ব পোস্টাল কোড রয়েছে। এছাড়া নিজস্ব পুলিশ, অগ্নিনির্বাপণ কর্মী ও জরুরি চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। মানের দিক দিয়ে এটাকে বিশ্বের সবচেয়ে সেরা বিমানবন্দরও বলা হয়ে থাকে।

. দেনভার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের দেনভার শহরে অবস্থিত বিমানবন্দরটি যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম বিমানবন্দর। আর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দরটি আয়তনে তৃতীয় স্থানে থাকা ডালাস বিমাবন্দরটির প্রায় দ্বিগুন। বন্দরটির মোট আয়তন ১৩ হাজার ৫৭০ হেক্টর। দেনভার বিমানবন্দরটি ফ্রন্টেইয়ার বিমান সংস্থা ও গ্রেট লেকস বিমান সংস্থার প্রধান পোতাশ্রয়। ৬টি কংক্রিটের রানওয়ের বন্দরটি বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম বিমানবন্দর। ২০১৬ সালে প্রায় ৫ কোটি ৮০ লাখ যাত্রী পরিবহণ করা বন্দরটি বিশ্বে ১৮ তম অবস্থানে ছিল।

. কিং ফাহাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সৌদি আরব

কিং ফাহাদ বিমানবন্দর বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর। সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে অবস্থিত বিমানবন্দরটির মোট আয়তন ৭৭ হাজার ৬০০ হেক্টর। বিমানবন্দরের তালিকায় তা অন্যদের তুলনায় দানবাকৃতির। বন্দরটি আয়তনে আরব দেশ বাহরাইনের চেয়েও বড়। তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বন্দরটির মাত্র ৩ হাজার ৬৭৫ হেক্টর এলাকা ব্যবহৃত হচ্ছে যা বন্দরটির মোট আয়তনের ৫ শতাংশেরও কম। যদি শুধু কার্যকর এলাকার কথা বলা হয় তাহলে বন্দরটি তালিকায় অনেক নিচে নেমে যাবে। বাদশাহ ফাহাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি তালিকায় সবচেয়ে নতুনও। ১৯৯৯ সালের নভেম্বরে চালু হওয়া বন্দরটি যাত্রী পরিবহণের দিক থেকেও অনেক পেছনের সারির বন্দর। বছর মাত্র এক কোটির মতো যাত্রী বন্দরটি ব্যবহার করে থাকে। তাই বলা যেতে পারে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দরটি সবচেয়ে কম উৎপাদনমুখী।


0/Post a Comment/Comments

Previous Post Next Post